শামীম আহমেদ ॥ পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বেসরকারী লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিসের কেবিনের জন্য আবেদন বা চাহিদাপত্র জমা নেয়া শুরু করা হয়েছে। যদিও সরকারীভাবে এখনও কোন ঘোষণা না আসলেও বরিশালের লঞ্চ মালিকরা নারীর টানে বাড়ি ফেরা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য কেবিনের চাহিদাপত্র, স্লিপ বা আবেদন নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম আগামী ১০ রমজান পর্যন্ত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।
সূত্রমতে, স্বচ্ছতার দোহাই দিয়ে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও আগেভাগে কেবিনের চাহিদাপত্র নেয়া হলেও যাত্রীরা কবে নাগাদ হাতে টিকিট পাবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। যদিও এরবাহিরে আগে আসলে আগে পাবেন এই ভিত্তিতেই কিছু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারও যাত্রীদের হাতে সরাসরি টিকিট তুলে দিবেন বলে জানিয়েছেন। তবে সেই টিকিটের জন্য আরও বেশ কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।
বরিশালের লঞ্চ কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কেবিনের আবেদন স্লিপ জমা নেয়া শুরু করেছে ক্রিসেন্ট শিপিং লাইন্সের সুরভী লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। যা চলবে ১০ রমজান পর্যন্ত। অপরদিকে ১০ রমজান (২৭ মে) থেকে ১৫ রমজান (১ জুন) পর্যন্ত সুন্দরবন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কেবিনের জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন। একইসময়ে এ্যাডভেঞ্চার লঞ্চ কর্তৃপক্ষও আবেদন গ্রহণ করবেন। যে সংক্রান্ত নোটিশ ওই সকল লঞ্চ কাউন্টারে টানিয়ে দেয়া হয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, আবেদনগুলো বরিশাল ও ঢাকার স্ব-স্ব লঞ্চের কাউন্টারে জমা দিতে হবে। আবার ভাগ্যে যদি মেলে যায় কাউন্টার থেকেই সোনার হরিন নামের কেবিনের টিকিট যাত্রীদের বুঝে নিতে হবে। এরবাহিরে কীর্তনখোলা, পারাবাত, টিপু, কালাম খান, ফারহানসহ ঢাকা-বরিশাল রুটের বাকী লঞ্চগুলোর টিকিট আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে সরাসরি যাত্রীদের মাঝে বিক্রি করা হবে।
সুরভী লঞ্চের বরিশাল কাউন্টারের ইনচার্জ নাইমুল ইসলাম জানান, ঈদে ঢাকা থেকে আসা ও বরিশাল থেকে যাওয়ার কেবিনের টিকিটের জন্য আবেদন গ্রহন শুরু করেছেন তারা। আবেদন যাচাই-বাছাই করে যাত্রী সাধারণের মাঝে টিকিট বিতরণ করা হবে। টিকিট বিতরণের তারিখ নির্ধারণ না হলেও যারা টিকিট পাবেন তাদের ফোনে জানিয়ে দেয়া হবে। অপরদিকে পারাবাত লঞ্চ কোম্পানির বরিশালে ইনচার্জ মোঃ সেলিম আহমেদ জানান, তাদের লঞ্চে কেবিনের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে না। তবে নৌ-মন্ত্রণালয়, মালিক সমিতি ও বিআইডব্লিউটিএ’র যৌথ সভার পরে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে লঞ্চের টিকিট বিক্রি শুরু করা হবে। সুন্দরবন নেভিগেশনের পরিচালক আকিদুল ইসলাম আকেজ জানান, আগামী ১০ রমজান থেকে ১৫ রমাজার পর্যন্ত তাদের লঞ্চের কেবিনের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হবে এবং যাচাই-বাছাই শেষে ৫ জুন থেকে যাত্রীদের মাধ্যে টিকিট বিতরণ করা হবে। চাহিদাপত্র নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের ফলে বিগত সময়েও যেমন টিকিট কালোবাজারির হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছেন এবারেও সেটি সম্ভব হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কেবিনের থেকে চাহিদা কয়েকগুন বেশি থাকায় লটারীর মাধ্যমে যাত্রীদের টিকিট দিতে হয়।
এসব রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীরা জানান, কম ভাড়া ও আরামদায়কসহ নানা কারণে নদী বেষ্টিত বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের যাতায়াত নৌ-পথে। ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের লঞ্চের কেবিনের টিকিট সাধারণ সময়েই অনেকটা সোনার হরিণ। তার পরে ঈদ মৌসুমে কালোবাজারিদের কাছেই পুরো টিকিট চলে যায়। তাদের কাছ থেকেই সাধারণ সময়ের চেয়ে ঈদ মৌসুমে তিনগুন বেশি দামে সাধারণ যাত্রীদের টিকিট সংগ্রহ করতে হয়।
এ ব্যাপারে এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চের মালিক মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস বলেন, কেবিনের টিকিট যেন কালোবাজারিদের হাতে না যায় সেজন্য আমরা সজাগ রয়েছি। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে কেবিনের টিকিট বিক্রি করা হবে।
লঞ্চ মালিক সমিতি সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আগামী ২০ রমজানের মধ্যে কেবিনের অগ্রিম টিকিট বুকিং শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, এবার লঞ্চের সংখ্যা অনেক বেশি এবং আকারও বড়। অতীতের ন্যায় এবারের ঈদে যাত্রীরা কোনো ধরনের ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই নারীর টানে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
বিআইডব্লিউটিসি’র সহ-মহাব্যবস্থপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্টিমারের কেবিন বুকিং ১৫ রমজান থেকে শুরু হবে। এই টিকিট শুধু ঢাকায় পাওয়া যাবে। এজন্য বিআইডব্লিউটিসি’র প্রধান কার্যালয়ের রিজার্ভেশন শাখায় যাত্রীদের যোগাযোগ করতে হবে।
সূত্রমতে, লঞ্চগুলোতে শুধু কেবিনের টিকিট অগ্রিম বুকিং করা হয়। তৃতীয় শ্রেণির টিকিট ভ্রমণের দিন লঞ্চে দেয়া হয়। এবার ঈদ-উল ফিতরে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে মোট ২২টি লঞ্চ ও ছয়টি স্টিমারে যাত্রী বহন করা হবে।