ঈদে যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় দুই অ্যাডভেঞ্চার

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রী পরিবহনে যুক্ত হচ্ছে দুটি বিলাসবহুল লঞ্চ অ্যাডভেঞ্চার-৫ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯।

দেশের অন্যতম বিলাসবহুল নৌযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড কোম্পানির অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এ দুটি লঞ্চ এখন যাত্রার অপেক্ষায় রয়েছে।

বরিশাল-ঢাকা নদীপথে এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ রাত্রীকালীন এবং অপরটি এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৫ চলবে দিবাকালীন সার্ভিসে। এ নিয়ে নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড কোম্পানির লঞ্চের সংখ্যা দাঁড়ালো তিনটিতে। অ্যাডভেঞ্চার-১ নামে এ কোম্পানির আরেকটি লঞ্চ বরিশাল-ঢাকা নদী পথে চলাচল করছে। এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড কোম্পানির এ যাবৎ সর্ববৃহৎ লঞ্চ।

প্রতি বছর ঈদ এবং অন্যান্য উৎসবকে কেন্দ্র করে বরিশাল-ঢাকা নদীপথে চলাচলরত লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের অনেক চাপ থাকে। নতুন দুই লঞ্চ চলাচল শুরু হলে ঈদে যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক হবে।

নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিলাসবহুল অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি নির্মাণকাজ শেষে প্রায় ১৫ ঘণ্টারও বেশি সময় নদীতে চালিয়ে দেখা হয়েছে। এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৫ লঞ্চটিও ট্রায়াল দেয়া হয়েছে। কোনো ত্রুটি ছাড়াই সব পরীক্ষাই উতরে গেছে লঞ্চ দুটি।

 

আগামী ৭ জুন ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে লঞ্চ দুটি। এর আগে ৬ জুন সদরঘাটে আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাজ দুটির উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

এরই মধ্যে লঞ্চ দুটির সব কেবিন ও স্লিপিং চেয়ার বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন নিজাম শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন।

অত্যাধুনিক লঞ্চ দুটি নির্মাণ হয়েছে বরিশাল নগরীর অদূরের ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার দপদপিয়ায় কীর্তনখোলা নদীর তীরে শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ডকইয়ার্ডে।

 

সোমবার সকালে অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে লঞ্চে লিফট, মিনি জিমনেশিয়াম, প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোড এরিয়া, বিনোদন স্পেস, বড় পর্দার টিভি, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারকম যোগাযোগের ব্যবস্থা, উন্মুক্ত ওয়াইফাই সুবিধাসহ রয়েছে বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা। আধুনিকতা ও প্রযুক্তি এবং আয়োজনের দিক থেকে কমতি নেই লঞ্চটিতে।

অভিজাত শ্রেণির বিলাসী যাত্রীদের জন্য লঞ্চটিতে রয়েছে ৯৫টি ডাবল ও ৮৫টি সিঙ্গেল কেবিন, একটি ডুপ্লেক্সসহ ৬টি ভিআইপি কেবিন, ৪টি সেমি ভিআইপি ও ৬টি ফ্যামিলি কেবিন।

 

কেবিনগুলো বানানো হয়েছে বিলাসবহুল আবাসিক তিন তারকা হোটেলের আদলে। ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো প্রতিটি কক্ষ। প্রতিটি কেবিনের সঙ্গে রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। এখানে বসে নদী, পানি, আকাশ আর আশপাশের মনোরম প্রকৃতি দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। কক্ষের ভেতরে রয়েছে এলইডি টেলিভিশন। রিভার সাইটের কেবিনের ভেতর থেকেও সহজেই দেখা যায় বাইরের নয়নাভিরাম দৃশ্য। লঞ্চের করিডরগুলোতে রয়েছে নান্দনিক ডিজাইন। নকশা ও কারুকাজ যে কারো মন কাড়বে। প্রায় ২ হাজার যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন লঞ্চটিতে রয়েছে ৩০টি স্লিপিং সোফা।

চারতলা লঞ্চটির ডেকের যাত্রীদের জন্য যাত্রা আরামদায়ক করতে নিচতলা ও দোতলায় বিছানো রয়েছে মসৃণ কার্পেট। বিনোদনের জন্য তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্য থাকছে বড় পর্দার টিভি এবং অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। খাবার জন্য রয়েছে কেন্টিন। রয়েছে নামাজের স্থান এবং পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা। নৌযানটিতে রোগীদের জন্য রাখা হয়েছে আইসিইউ, সিসিইউসহ মেডিকেল সুবিধা।

 

পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তায় লঞ্চটিতে থাকবে একজন কমান্ডারসহ একদল সশস্ত্র আনসার সদস্য। সেই সঙ্গে পুরো লঞ্চটি থাকছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত লাইফ বয়া রাখা হয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য।

এছাড়া লঞ্চটি পরিচালনার জন্য দক্ষ প্রথম শ্রেণির মাস্টার, সুকানি ও ইঞ্জিনচালক (ড্রাইভার) ছাড়াও মোট ৫৫ জন বিভিন্ন শ্রেণির ক্রু রয়েছে।

নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম জানান, নৌ-স্থাপতির নকশায় সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে দুই বছরের মতো সময় লেগেছে অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের নির্মাণকাজ শেষ করতে। ৩১০ ফুট দৈর্ঘ্যের নৌযানটির প্রস্থ ৫০ ফুট। প্রায় দুই হাজার যাত্রী ধারণের ক্ষমতা রয়েছে লঞ্চটির। সেই সঙ্গে দুই শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সুবিধাও রয়েছে। নৌযানটি বিলাসবহুল হলেও ভাড়ায় তেমন পরিবর্তন হবে না। সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া অন্যসব নৌযানের মতোই রাখা হয়েছে। ডেকের যাত্রীর ভাড়া আড়াইশ টাকা। সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকার ডুপ্লেক্স কেবিন রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চে।

 

প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে একই কোম্পানির দিবাকালীন সার্ভিসের ক্যাটামেরিন পদ্ধতির অ্যাডভেঞ্চার-৫ নৌযানটি যাত্রী পরিবহনে সংযুক্ত হচ্ছে একই দিন। সম্পূর্ণ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত নৌযানটিতে ৫২০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে নিচতলার ৩০০ আসন ৭০০ টাকা এবং দোতলার ২০০ আসনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। পাশাপাশি ভিআইপিদের জন্য ২০টি আসন রাখা হয়েছে ১২০০ টাকা করে। দোতলায় আরও থাকছে দুটি ভিআইপি ও একটি সেমি-ভিআইপি কেবিন। যা দিবা-সার্ভিসে অন্য কোনো নৌযানে নেই। এছাড়া যাত্রীদের একগুঁয়েমি কাটাতে নৌযানটির চারপাশে বারান্দা রাখা হয়েছে।

নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন জানান, লঞ্চ দুটি তৈরির সময় যাত্রী ও নৌযানের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাহাজ নির্মাণের অন্যতম কাঁচামাল ইস্পাতের তৈরি নতুন পাত আমদানি করা হয়েছে। ইঞ্জিন, প্রপেলারসহ সব কিছুই নতুন আমদানি করা হয়েছে। কয়েক স্তর বিশিষ্ট স্টিলের মজবুত তলদেশ থাকায় দুর্ঘটনায় তলদেশ ফেটে লঞ্চডুবির আশঙ্কা নেই।

তিনি জানান, অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি নির্মাণের শুরুর দিকে হেলিকপ্টারের জরুরি অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়। পরবর্তীতে সিভিল অ্যাভিয়েশন অনুমতি না দেয়ায় শেষ পর্যন্ত হেলিপ্যাড সুবিধা রাখা যায়নি। তবে লিফট, মিনি জিমনেশিয়াম, প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোড এরিয়া, বিনোদন স্পেস, শপিং কর্নার, রেস্টুরেন্ট, বড় পর্দার টিভি, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারকম যোগাযোগের ব্যবস্থা, উন্মুক্ত ওয়াইফাই সুবিধা এই লঞ্চযাত্রীদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নতুন একটা ধাপে নিয়ে যাবে। নৌযানটি বিলাসবহুল হলেও ভাড়ায় তেমন পরিবর্তন হবে না। সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া অন্যসব নৌযানের মতোই থাকবে।

মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি যাত্রীসেবা প্রদান হবে লঞ্চ দুটির মূল লক্ষ্য এমনটি জানিয়েছেন নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন।