ঈদে বরিশাল-ঢাকা আকাশপথেও ঘরমুখো মানুষের ঢল, বেড়েছে ফ্লাইট

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে আকাশপথেও। একই সঙ্গে ঈদের লম্বা ছুটিতে বিশ্বের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে অবকাশ যাপনে ছুটছে দেশের অসংখ্য মানুষ। চাহিদা বাড়ায় সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের বিমান টিকিটের দাম আকাশচুম্বী। যদিও যাত্রীর চাপ সামাল দিতে অভ্যন্তরীণ রুটে এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট বাড়িয়েছে। তবে প্রায় সব এয়ারলাইনসের ঈদের আগের অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিট বিক্রি প্রায় শেষ। বাড়তি ফ্লাইটের কিছু টিকিট মিলছে, যদিও তার জন্য কয়েক গুণ বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। যাত্রীরা এয়ারলাইনসগুলোর বিরুদ্ধে কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ করেছে।

এয়ারলাইনসগুলো জানায়, এবার ঈদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও বরিশাল রুটে চলবে ৭৭টি বাড়তি ফ্লাইট। এর মধ্যে নভোএয়ার অতিরিক্ত ২৫টি, ইউএস-বাংলা ৫০টি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দুটি ফ্লাইট বাড়তি পরিচালনা করবে। এর মধ্যে রিজেন্টের উড়োজাহাজ শুধু চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে চলাচল করে। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গ্রীষ্মকালীন সিডিউলে গত মাস থেকেই অভ্যন্তরীণ রুটে সপ্তাহে ৩০টি ফ্লাইট বাড়িয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এই বিমান সংস্থা ঢাকা থেকে সৈয়দপুরে সপ্তাহে সাতটি থেকে ফ্লাইট বাড়িয়ে ১৪টি, রাজশাহীতে চারটি থেকে সাতটি, যশোরে সাতটি থেকে ১২টি, চট্টগ্রামে ২৮টি থেকে ৩৫টি, সিলেটে ২৩টি থেকে ২৮টি, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে তিনটি থেকে পাঁচটি, ঢাকা-কক্সবাজারে ১৪টি, বরিশালে চারটি থেকে বাড়িয়ে পাঁচটি করেছে।

ঈদ যাত্রায় ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে যাত্রীদের দুই হাজার ৭০০ টাকার ভাড়া (ওয়ান ওয়ে) গুনতে হচ্ছে সাত হাজার ৫০০ থেকে আট হাজার ৫০০ টাকা। একইভাবে যশোর রুটের দুই হাজার ৫০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে সাত হাজার ৫০০ টাকা এবং ঢাকা-বরিশাল রুটে তিন হাজার টাকার ওয়ান ওয়ে টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে ছয় হাজার ৫০০ থেকে সাত হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা-রাজশাহী রুটের টিকিট বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আট হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রামে তিন হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকা রাখা হচ্ছে টিকিটপ্রতি।

গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বনানী অফিসে টিকিট কাটতে এসেছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শারমিনা আরজু। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কম ভাড়ার আশায় বিমানের টিকিটের জন্য এসেছিলাম, কিন্তু বিমানের টিকিট হাওয়া। টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি।’

জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘যাত্রীদের জন্য আমাদের সামার শিডিউল, ঈদসহ অভ্যন্তরীণ রুটে ৩২টি ফ্লাইট বাড়িয়েছি। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিদেশ ভ্রমণ ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার চাপ সামাল দিতে আমরা দাম্মাম, জেদ্দা, কুয়ালালামপুর রুটে ৩ জুন থেকে একটি করে ফ্লাইট বাড়িয়েছি। এ ছাড়া ঢাকা থেকে যশোর ও বরিশাল রুটেও আমরা একটি করে ফ্লাইট বাড়িয়েছি।’

ভাড়া বৃদ্ধি ও টিকিট ব্লক রাখা নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শাকিল মেরাজ বলেন, ‘ঈদে ভাড়া বেড়েছে, এটা নির্ভর করে বাজারের ওপর। এয়ারলাইনসের সিট এমনিতেই সীমিত। যারা উড়োজাহাজে যাতায়াত করে তারা সাধারণত তিন-চার মাস আগেই ট্রাভেল প্ল্যান করে এবং অনেকেই টিকিট কেটেও রাখে। এখন পর্যন্ত কয়েকটি অভ্যন্তরীণ রুটে চাহিদা বাড়ায় ভাড়া প্রায় আট হাজারের ঘরে পৌঁছেছে। অনলাইনে আমরা সব টিকিট উন্মুক্ত করেছি। এটা আটকে রাখার কিংবা ব্লক করে রাখার সুযোগ নেই।’ সব যাত্রীই বিমানের কাছে সমান বলে দাবি করেন তিনি।

ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রী চাহিদার কারণে ঈদে সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী, বরিশাল রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে ৩০ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত চলবে এসব ফ্লাইট। আবার ৪ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ঢাকামুখো মানুষের জন্যও বাড়তি ফ্লাইট চলবে। ঈদে ইউএস-বাংলা ৫০টি বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

তিনি বলেন, কম ভাড়ার টিকিট অনেক আগেই বিক্রি হয়ে যায়। ফলে শেষ মুহূর্তে এসে কেউ টিকিট কাটতে গেলে সর্বোচ্চ ভাড়ার টিকিটই মিলবে। তিনি বলেন, অন্য সময় যাওয়া-আসা দুই পর্যায়েই ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ যাত্রী থাকে। ঈদে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ যাত্রী পাওয়া যায় ফিরতি ফ্লাইটে। সেটাও অনেকের বিবেচনায় থাকে না। তিনি বলেন, ‘আমরাই একমাত্র দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ছাড়াও দুটি নেক্সট জেনারেশন এয়ারক্রাফট এটিআর-৭২-৬০০ দিয়ে ডমেস্টিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছি।’

নভোএয়ারের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মেসবাহ উল হক বলেন, ‘এবার ঈদের প্রায় ৯ দিনের মতো ছুটি পড়ায় অনেক আগে থেকেই মানুষের ঘরে ফেরা শুরু হয়েছে। তাই এবার লোড ফ্যাক্টর কম। তবু আমরা ২৫টি বাড়তি ফ্লাইট দিয়েছি।’

ঈদে মধ্যপ্রাচ্য, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও কলকাতা রুটে যাত্রীর চাপ বেড়েছে বলে জানালেন রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক সোহেল মজিদ। তিনি গতকাল বলেন, ‘এ বছর মানুষের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ঝোঁক বেশি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে দুবাই, আবুধাবি, জেদ্দা, শারজাহ, সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে। ই-ভিসা চালু এবং মক্কা-মদিনার বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ায় প্রচুর মানুষ সৌদি আরব যাচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে টুরিস্ট ভিসা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় সেখানেও অনেকে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাস্কাট ও দোহা রুটে আমাদের প্রবাসী কর্মীদের চাহিদা বেশি।’ কালের কণ্ঠ।