ঈদে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রী নিরাপত্তায় গ্রহণ করা হয়েছে ৩৯ নির্দেশনা

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

কখনও রোদ আবার কখনও হঠাৎ বৃষ্টি। আবার কখনও ধেয়ে আসছে দমকা হাওয়া আর বজ্রপাত। আবহাওয়ার এমন খেলা চলবে জুন মাস জুড়েই। আর এসময় ঈদ-উল ফিতরের ছুটিতে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ ঘরমুখো মানুষের নৌপথে নিরাপদে বাড়ি ফেরায় দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

তাই বাড়তি চাঁপ মাথায় রেখে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে করতে প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থা ও নৌযান সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে ৩৯টি নির্দেশনা দিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। ঈদের কয়েকদিন অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে লঞ্চগুলো। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার সেটি একেবারেই করতে দেয়া হবে না। সেই সাথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের সুবিধার্থে আগামী ১২ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত দিনের বেলায়ও বালুবাহী নৌযান বাল্কহেড চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক বলেন, ঈদযাত্রায় হঠাৎ কালবৈশাখী বা ঝড়-বৃষ্টি হলে তা লঞ্চযাত্রীদের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করবে। মানুষের বাড়ি গিয়ে ঈদ আনন্দ করার চেয়ে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই লঞ্চগুলো যাতে সক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী বহন করে সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাঝ নদীতে ঝড় উঠলে মানুষ আতঙ্কে লঞ্চে ছোটাছুটি শুরু করে। বাতাসের তীব্রতা তখন লঞ্চের বডিতে আঘাত করে। তাই আবহাওয়া খারাপ দেখলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আবহাওয়ায় ২ নম্বর সিগন্যাল থাকলে শুধু বড় লঞ্চ চলাচল করতে পারবে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি’র কঠোর নির্দেশনায় গেল কয়েকবছরে ঈদে লঞ্চ দুর্ঘটনায় বড় ধরনের কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে চলতি মে মাসে দফায় দফায় কালবৈশাখী হয়েছে, যা লঞ্চযাত্রীদের জন্য আতঙ্ক। দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চ দুর্ঘটনায়ও পরেছে। এগুলো বড় লঞ্চ হওয়ায় অবশ্য প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু ঈদে এমন দুর্ঘটনা হলে বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হবে। এজন্য এবারও নৌ-মন্ত্রী নৌদুর্ঘটনা এড়াতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।

সূত্রমতে, সারাদেশে ২০২টি রুটে কম-বেশি আটশ’ যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) থেকে ৪২টি রুটে আছে ২০৩টি লঞ্চের রুট পারমিট। সাধারণ সময়ে প্রতিদিন সদরঘাট থেকে রোটেশন প্রথায় অর্ধশতাধিক লঞ্চ এসব রুটে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। একই সংখ্যক লঞ্চ যাত্রী নিয়ে সদরঘাটে আসে। তবে ঈদের আগের তিন থেকে পাঁচদিন রোটেশন প্রথা থাকেনা। তখন যাত্রীর চাঁপ বেশি থাকায় প্রায় শতাধিক লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত ১০ মে গ্রীণ লাইনের একটি ক্রুজারের সাথে সাব্বির নামের আরেকটি লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। এতে গ্রীণ লাইন জাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও প্রাণহানি হয়নি। অপরদিকে মেঘনার মোহনায় যাত্রীবাহী সুন্দরবন-১১ লঞ্চের সাথে সংঘর্ষ হয় পণ্যবাহী কার্গোর। একইস্থানে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ফ্লাইঅ্যাশবাহী জাহাজ এমভি এশিয়া ও এমভি সাফা-সারা জাহাজের মধ্যেও সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় সুন্দরবন-১১ লঞ্চটির ব্যাপক ক্ষতি ও একটি মালবাহী জাহাজ ডুবে যায়। সাধারণত এসব দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কা থাকে। তাই আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে করা নিয়ে বেশ চিন্তিত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। যাত্রীর নিরাপত্তায় পাঁচ ক্যাটাগরিতে ৩৯টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবেনা। এ বিষয়ে টার্মিনালগুলোতে সতর্কবাণী মাইকে ও মনিটরে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি আগামী ১২ থেকে ২০ জুন দিনের বেলায়ও বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদের আগের তিনদিন ও পরের তিনদিন ফেরিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সাধারণ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পারাপার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।