ঈদযাত্রা: বরিশাল নদীবন্দরে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যেভাবে বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোতে যাত্রী কমেছিলো, তাতে এবারের কোরবানির ঈদেও শঙ্কা দেখা দিচ্ছিলো। তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে ঈদের মাত্র দুদিন আগে স্পেশাল সার্ভিস দিতে শুরু করেছে লঞ্চগুলো।

এ সার্ভিসের প্রথম দিনে সরকার নির্ধারিত কিংবা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগের ভাড়াতেই লঞ্চ বোঝাই করে যাত্রী নিয়ে মধ্যরাতে ঢাকা থেকে বরিশাল নদী বন্দরে এসে পৌঁছায় লঞ্চগুলো। প্রথমদিনে বরিশাল নদী বন্দরে সরাসরি ১০ এবং ভাড়া রুটের চারটি লঞ্চ এবং সরকারি একটি জাহাজ বরিশাল নদী বন্দরে এসে পৌঁছায়।

 

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো শুক্রবার (০৮ জুলাই) ভোররাত থেকে একে একে বরিশাল নদীবন্দরে নোঙ্গর করতে থাকে। প্রতিটি লঞ্চের কেবিন ও ছোফা, ছাদে, কেবিনের করিডোর, বেলকুনি, প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ডেকসহ সবস্থানে যাত্রী ছিলো।

 

যাত্রীরা জানান, পদ্মাসেতু উদ্বোধন পর যাত্রী না পেয়ে সরকার নির্ধারিত বা আগের ভাড়ার থেকে অনেক কম ভাড়া আদায় করতে লঞ্চগুলো। কিন্তু কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে তারা আগের ভাড়াই রাখতে শুরু করেছে।

যেমন ডেকের ভাড়া ৩৫০ টাকা করে আদায় করেছে। আবার সোফায় ৭শ’ টাকা, ডাবল কেবিনে ২৫ শত টাকা ও সিঙ্গেল কেবিনে ১৪শ’ টাকা করে ভাড়া নিয়েছে।

অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের যাত্রী মিরাজ বলেন, যাত্রী বোঝাই হলেই লঞ্চ ছেড়ে দেবে এ ভয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কয়েক ঘণ্টার যানজট ঢেলে দুপুরের পর লঞ্চে উঠি। কিন্তু লঞ্চ তো ঠিকই সাড়ে ৮ টার দিকে ছাড়লো।

এরপর যত দ্রুত সম্ভব টেনে এসে বরিশাল ঘাটে মাঝ রাতে নামিয়ে দিলো। প্রতিবার বরিশাল সিটি মেয়রের পক্ষ থেকে লঞ্চঘাটে ফ্রি বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকলেও এবারে না থাকায় ভোগান্তি পরলাম মনে হচ্ছে।

কারণ টার্মিনালের সামনের সড়ক দখল করে রাখা থ্রি-হুইলারগুলো গন্তব্যে যেতে ইচ্ছেমতো ভাড়া চাচ্ছে। আবার টার্মিনালে যাত্রীর যে চাপ তাতে এখানে অপেক্ষা করাটাও কষ্টের।

আর গভীর রাতের বিষয়টি পুঁজি করে থ্রি-হুইলার চালকরা গন্তব্যে যেতে তিন থেকে চারগুণ ভাড়া চাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইকবাল হোসেন নামে অপর এক যাত্রী।

তিনি বলেন, শুধু লঞ্চঘাট থেকে রুপাতলী টার্মিনালে যেতেই অটোরিক্সায় জনপ্রতি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঈদে যে রকম যাত্রী ছিলো সেই রকমই যাত্রী দেখা গেছে বরিশাল নদী বন্দরে।

সুন্দরবন নেভিগেশনের পরিচালক আকিদুল ইসলাম আকেদ বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যেভাবে যাত্রী হ্রাস পেয়েছিলো, তাতে ঈদে যাত্রী নিয়ে শঙ্কা ছিলো। কিন্তু এখন দেখছি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী লঞ্চে এসেছে।

তবে যদিও এবারে স্পেশাল সার্ভিসে লঞ্চের সংখ্যা কম বলেও জানান তিনি। নিজাম শিপিং এর ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সদ্য পদ্মা সেতু চালুর পরে লঞ্চে এতো পরিমাণ যাত্রী হবে তা কারো ধারণা ছিলো না। তবে ধারণা ছাপিয়ে লঞ্চে যাত্রী হওয়ায় মনে হচ্ছে নৌ-পথের যাত্রাকেই নিরাপদ মনে করেছে ঘরমুখো মানুষগুলো।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক মো. কবির হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন যেভাবে যাত্রী কম ছিলো, তার ঠিক উল্টো হয়েছে আজ।

স্পেশাল সার্ভিসের লঞ্চে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচে পরা ভিড় দেখা গেছে বরিশাল নদী বন্দরে। গেলো রাতে ঢাকা থেকে বরিশালে চারটি ভায়া, দুইটি সরকারী, একটি দিবা সার্ভিস বেসরকারি ১০টিসহ মোট ১৬টি লঞ্চ বরিশালে এসে পৌঁছেছে। বেসরকারি কোম্পানির লঞ্চগুলো যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ভোররাতেই ঢাকায় ফিরে গেছে।

এছাড়া শুক্রবার দুপুরের পরে আরও তিনটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে বরিশালে এসে পৌঁছাবে বলে জানান তিনি। এদিকে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তায় নৌ-বন্দর এলাকাসহ গোটা বরিশাল নগর জুড়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক)শেখ মো. সেলিম।

এছাড়া বরিশাল নদী বন্দরে নৌ পুলিশ, কোষ্টগার্ডের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ২টি স্টেশনের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে।