পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আসন্ন কোরবানির ঈদযাত্রায় বরিশাল-ঢাকা নদীপথে যাত্রী কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন লঞ্চ মালিকরা। তাই ঈদে বরাবরের মতো ‘স্পেশাল সার্ভিস’ চালানোর পরিকল্পনা এবার চূড়ান্ত করতে পারেননি তারা।
শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যান চলাচলের জন্য খুলে গেছে রোববার। আর কোরবানির ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে ১০ জুলাই, অর্থাৎ সময় হাতে আছে দুই সপ্তাহেরও কম।
সেতু চালুর পর এটি প্রথম ঈদ হওয়ায় লঞ্চে যাত্রী কমবে, এ বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত মালিকরা। এতদিন রোজার এবং কোরবানির দুই ঈদের ২০-২৫ দিন আগে থেকেই এই রুটে যাত্রী চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছেন মালিক কর্তৃপক্ষ। যাত্রা নির্বিঘ্নে সরকারও তৎপর থেকেছে। এমনকি ঈদের দিনেও লঞ্চগুলোয় উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
লঞ্চের ভিআইপি, সেমি ভিআইপি, প্রথম শ্রেণির কেবিন, দ্বিতীয় শ্রেণির সোফার টিকেট পেতে রীতিমতো ঘাম ছুটে যেত যাত্রীদের। লঞ্চের নির্ধারিত ডেকে বসার জায়গা না পেলেও ঝুঁকি নিয়েও যাত্রীরা পরাপার হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। এবার পদ্মা সেতু সে চিত্র পাল্টে দেবে বলে ধারণা লঞ্চ মালিকদের।
বরিশাল-ঢাকা রুটের বিলাসবহুল এমভি সুন্দরবন লঞ্চের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, “সেতু চালু হওয়ার পর এটি প্রথম ঈদ। লঞ্চে যাত্রী কিছুটা কমবে তা নিশ্চিত। তবে কতটুকু কমে সেটি দেখার বিষয়।”
“তাই আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণে রেখেছি। যে কারণে ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের’ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।” ঈদযাত্রায় লঞ্চের বিশেষ সার্ভিসের পরিকল্পনা চূড়ান্ত না হলেও রিন্টু বলেন, “যদি ৯ জুলাই ঈদ হয়, তাহলে ৭ ও ৮ জুলাই দুই দিন ঢাকা থেকে বরিশালের বিশেষ সার্ভিস চলবে। আর ১০ জুলাই হলে ৯ জুলাই চলবে।”
তবে এর সবই নির্ভর করছে যাত্রী চাপের উপর, তাও বলেন তিনি। অবশ্য রিন্টু আশা করছেন, নৌ পথে ভাড়া কম হওয়ায় অনেক যাত্রী লঞ্চেই বাড়িমুখো হবেন। বাস এবং লঞ্চের ভাড়ার পার্থক্য টেনে তিনি বলেন, “বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল আসতে একজন যাত্রীর সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা লাগে। সেখানে এই ভাড়া দিয়ে লঞ্চে দুজন যাত্রী বরিশাল আসতে পারবে। এছাড়া সঙ্গে ছোট বাচ্চারাও ফ্রি আসতে পারছে। যেটা বাসে সম্ভব না।”
বরিশাল-ঢাকা রুটের সুরভী লঞ্চের ব্যবস্থাপক মো. বেল্লাল জানান, এবার এখনও বিশেষ সেবা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও আগাম টিকেট বিক্রি কার্যক্রম চলছে।
“তবে যাত্রীদের কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া মিলছে না,” বলেন তিনি। ঢাকায় চাকরি করা বরিশালের খালেকুজ্জামান রাসেল জানান, প্রতি বছর দুই ঈদের সময়ে বাড়ি যেতে লঞ্চের কেবিন পেতে নানাজনের কাছে তাকে তদবির করতে হয়েছে।
পদ্মা সেতু: মন্দা নয়, লঞ্চ মালিকরা দেখছেন ‘সম্ভাবনা’ অগ্রিম টিকেট কিনে বাড়ি যাওয়ার দিন ঘাটে এসে দেখেন লঞ্চ ছেড়ে গেছে, তখন বাধ্য হয়ে আবার টিকেট কাটতে হয়েছে- এমন অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়ে রাসেল বলেন, এবার তিনি পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়িতে যেতে চাইছেন।
তিনি বলেন, “এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের মতো। পদ্মা সেতুও দেখা হবে। আবার পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে ঈদও করা হবে। ” বিআইডব্লিউটিসির নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক মো. কবির হোসেন জানান, বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলের জন্য অনুমোদন আছে ২৪টি লঞ্চের। দুই ঈদে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৮টি লঞ্চ চলাচল করেছে।
তিনি বলেন, “দুই ঈদের আগের এবং পরের দুই-তিন দিন একেকটি লঞ্চ দুইবার করেও ট্রিপ দেয়। এবার তেমন না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আগাম এর বেশি কিছু বলা যাবে না।”
রোববার বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া সাতটি লঞ্চে তেমন কোনো যাত্রী ছিল না। বিআইডব্লিউটিসির নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক এবং বরিশাল নৌ বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “পদ্মা সেতু এবার নৌ-পথে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে।
কী ধরনের অভিজ্ঞতা হয়, তার জন্য অপেক্ষায় আছি।” ঈদে বরিশাল-ঢাকা নৌ-পথে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিসের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্বান্ত না হলেও আগের মতোই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে জানান এই কর্মকর্তা।