বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সার্কুলারে আপত্তি জানিয়ে আন্তর্জাতিক ই-পেমেন্ট কোম্পানি মাস্টারকার্ড বলেছে, ওই সার্কুলার মেনে অনলাইন লেনদেন করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিস্টেমে লেনদেন করতে বলছে সেটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। ফলে ওই চ্যানেলে লেনদেন করাও নিরাপদ নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারটি ব্যাংকিং খাতে কার্ডশিল্পের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করবে বলেও জানিয়েছে মাস্টারকার্ড।
কোম্পানিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বিকাশ ভার্মা সম্প্রতি এ ধরনের আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে ইলেকট্রনিক্স লেনদেন বা ই-পেমেন্ট সিস্টেম উন্নত করতে তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেছেন, এ খাতে তারা একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চান।
মাস্টারকার্ডের আপত্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা তাদের বিষয়টি পরে (বিবেচনা করে) দেখব। পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট গত ২৪ আগস্ট একটি সার্কুলার জারি করে জানায়, বাংলাদেশে ইস্যুকৃত সব কার্ডের অভ্যন্তরীণ আন্তব্যাংক লেনদেন ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) এর মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। ৩১ ডিসেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাংলাদেশে ভিসা মাস্টারকার্ডসহ অনলাইন লেনদেনের যাবতীয় কার্যক্রম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনপিএসবির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। গভর্নরকে লেখা চিঠিতে এই সার্কুলারের বিষয়ে আপত্তি তুলে মাস্টারকার্ড বলেছে, অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলের ওপর এ ধরনের নির্ভরতা (শুধু এনপিএসবির মাধ্যমে লেনদেন) সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এনপিএসবি সিস্টেমকে অনিরাপদ নেটওয়ার্ক হিসেবে উল্লেখ করে মাস্টারকার্ড বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক পিসিআই ডিএসএস (পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি ডাটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড) কর্তৃক স্বীকৃত নয়। মাস্টারকার্ডের এ ধরনের চিঠির জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ জানায়, বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে এনপিএসবির মাধ্যমে সব কার্ডের লেনদেন করতে বলা হয়েছে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত লেনদেনের সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যাবে।
এ সম্পর্কিত সব তথ্য মনিটরিং করা সম্ভব হবে। ফলে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণ করার সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া এনপিএসবি ব্যতীত অন্য কোনো চ্যানেলে লেনদেন করার ফলে দেশ থেকে বিদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আর নিরাপত্তার বিষয়ে পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ জানায়, এনপিএসবি-এর নিরাপত্তা জোরদারে পিসিআই ডিএসএস কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেমেন্ট অপশনগুলো হলো ভিসাকার্ড, মাস্টারকার্ড, নেক্সাসকার্ড, বিকাশ, মোবাইল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং এবং কিউক্যাশ ইত্যাদি। দেশে ই-কমার্স জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে ওপিজি বা অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের অবদান বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ৮০ লাখ মানুষ ডেবিটকার্ড, ২০ লাখ মানুষ ক্রেডিটকার্ড ব্যবহার করেন। এ ছাড়া প্রায় তিন কোটি মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং করেন।