ইয়াসির-জয়কে ঘিরে পাঁচে নতুন আশা

:
: ২ years ago

ওয়ানডে ফরম্যাটে পাঁচ নম্বর ব্যাটিং পজিশন অতি গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয় টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে মিডল অর্ডারের দায়িত্ব ইনিংস মেরামত করার। চারের ব্যাটসম্যান ইনিংস দীর্ঘ করবেন। কিন্তু পাঁচের ব্যাটসম্যান ইনিংসের ঔজ্জ্বলতা, গভীরতা বাড়াবেন। প্রতি আক্রমণে দ্রুত রান করবেন। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলের রান নিয়ে যাবেন চূড়ায়।

কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটে গত কয়েকটি সিরিজ ধরেই পাঁচ নম্বর জায়গাটা নড়বড়ে। বিভিন্ন ক্রিকেটারকে পরীক্ষা করানো হলেও কেউ থিতু হতে পারেননি। আবারো নতুন আশায় বুক বেঁধেছে বাংলাদেশ। ইয়াসির আলী রাব্বি ও মাহমুদুল হাসান জয়কে ঘিরেই নতুন স্বপ্ন বাংলাদেশের।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বুধবার ইয়াসিরের মাথায় উঠছে ওয়ানডে ক্যাপ। টেস্টের পর ওয়ানডে অভিষেক হচ্ছে তার। জয়কে আপাতত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। তাকে নজরে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের বিশ্বাস, ইয়াসির ও জয় দলের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন ভালোভাবে, ‘পাঁচ নম্বর নিয়ে একটা ভাবনার জায়গা অবশ্যই ছিল, এখানে কাউকে এখনো আমরা পাকা করতে পারিনি। ইয়াসিরকে নেওয়া হয়েছে, জয়কেও। আমাদের হাতে অপশন আছে। এখানে উপযুক্ত কাউকে পেলে আমাদের জন্য খুবই ভালো। কারণ খুব গুরুত্বপূর্ণ পজিশন পাঁচ নম্বর। কখনো দ্রুত রান তুলতে হতে পারে, কখনো শুরুতে উইকেট পড়ে গেলে পুরো ইনিংস ধরে রাখতে হতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি কাউকে বের করার। ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা ভালো করছে, তাদের আমরা সুযোগ দিচ্ছি।‘

পাঁচের এই জায়গাটা সাকিব আল হাসানের জন্য পাকাপাকিই ছিল। ২১৫ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩৩ ম্যাচেই সাকিব নেমেছিলেন এই পজিশনে। ক্যারিয়ারের ৬৬০০ রানের ৩৮৫২ রানই এসেছে ওই পজিশনে। কিন্তু নিজেকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে সাকিব যখন টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন তখনই দেখা দেয় বিপত্তি। সাকিব তিনে থিতু হয়ে গেলে পাঁচের জন্য বিশেষজ্ঞ কাউকেই পায়নি বাংলাদেশ। ফলে ওয়ানডে ফরম্যাটে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠে ‘পরীক্ষা কেন্দ্র’।

নিয়মিত বিভিন্ন ব্যাটসম্যানকে বাজিয়ে দেখা হয় ওই পজিশনে। সবশেষ মোহাম্মদ মিঠুনকে সেখানে ব্যাটিংয়ে নেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। তার রেকর্ড বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খারাপ নয়। ২১ ম্যাচে ৩২.২৫ গড়ে করেছেন ৫১৬ রান। সর্বোচ্চ ৭৩ রান করেছিলেন ক্রাইস্টচার্চে। কিন্তু ওই ম্যাচের পর দলের প্রয়োজনে তার ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনা হয়। সেখানে ভালো করতে না পারায় বাদ পড়েন। সবশেষ দুই ম্যাচে মোসাদ্দেক পাঁচে ব্যাটিংয়ে নেমে করেছিলেন ১ ও ২ রান। মাহমুদউল্লাহ খুলতে পারেননি রানের খাতা। ফলে পাঁচ নিয়ে নতুন দুর্ভাবনা শুরু হয়।

ইয়াসির ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত চার-পাঁচে ব্যাটিং করলেও জয়ের ঠিকানা ছিল টপ অর্ডার। ওপেনার হিসেবেই তার অভিষেক হয়েছে টেস্ট ক্রিকেটে। পেশাদার ক্রিকেটে তাকে মিডল অর্ডারে পাওয়া যায়নি কখনো। তবুও তাকে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করার কারণ স্পিন ভালো খেলতে পারেন।

তামিমের ব্যাখ্যা, ‘জয়কে আমি যতটুকু দেখেছি, সে ওয়ানডেতে মিডল অর্ডারেই খেলে। ৩-৪ নম্বরেও ব্যাট করেছে। শীর্ষ তিনে ব্যাট করার সামর্থ্যও তার আছে। যদি টিম ম্যানেজমেন্ট বা আমরা মনে করি, তাকে এখানেও দেখা যেতে পারে। ওয়ানডেতে সে ৩-৪ নম্বরে ব্যাট করেছে। স্পিনও অনেক ভালো খেলে। এই জিনিস মাথায় রেখেই ওকে নিয়েছি। তরুণদের মধ্যে ও অন্যতম যে স্পিন ভালো খেলে।’

আর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৭৭ ম্যাচে ৩৪.৭৭ গড়ে ১৮৭৮ রান করা ইয়াসিরে পুরোপুরি আস্থা ওয়ানডে অধিনায়কের, ‘ইয়াসিরের ক্ষেত্রেও তাই। গত কয়েক বছর ধরে ভালো খেলছে, সুযোগ পেলেই কাজে লাগাচ্ছে। দেখা যাক কে ব্যাট করে। এই দুই জন থেকে কেউ খেললে সে পাঁচে থাকবে, এটুকু বলতে পারি।’

নেটে আজ জয়কে ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি। ম্যাচের আগে ইয়াসিরকে নিয়েই বেশি কাজ করতে দেখা গেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। শেষ মুহূর্তে ছোটখোটো ভুল ধরিয়ে তাকে বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে বাংলাদেশে ১৩৭তম ওয়ানডে ক্যাপ পেতে যাচ্ছেন তিনি। চট্টগ্রামেই তার টেস্ট যাত্রা শুরু হয়েছিল। নিজ শহরেই রঙিন স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে তার।