ইয়াবার মামলায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সাবেক ওসি কারাগারে

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

৪৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম গত ৮ দিন ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। ইয়াবা পাচারের মামলায় আসামি কামরুল ইসলাম গত ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলেও আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে গত আট দিন ধরে তিনি জেলা কারাগারে রয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান ও জেলা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন।

জেলা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, গত ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালত কামরুল ইসলামের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। পরে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি গোপন রেখেই কামরুল ইসলামকে কারাগারে প্রেরণ করে।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

গত বছরের ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ বন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সদর মডেল থানার এএসআই মোহাম্মদ সরওয়ার্দীর বাসা থেকে ৪৯ হাজার পিস ইয়াবা ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করে। পরে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার আসামি পুলিশ সদস্য আসাদুজ্জামান ও মোহাম্মদ সরওয়ার্দী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেন, এটি তারা নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে করেছেন। তার নির্দেশেই টাকা ও ইয়াবা রেখে আসামিদের ছেড়ে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিপুল পরিমাণ মাদক ও টাকাসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া কনস্টেবল আসাদুজ্জামানের জামিন শুনানিকালে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম, পিপিএম-এর সম্পৃক্ততায় বিস্ময় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই মাদক মামলার সঙ্গে ওসি কামরুলের সম্পৃক্ততা থাকা সত্ত্বেও তাকে আসামি না করায় অবাক হন হাইকোর্ট।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আজাদকে তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী ৪ মার্চ সশরীরে হাজির হয়ে মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এদিকে সিআইডির এই তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ওই ঘটনায় ওসি কামরুলের সম্পৃক্ততা পাননি উল্লেখ করে চার্জশিট থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। গত বছরের ৪ মার্চ উচ্চ আদালতের নির্দেশে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় ওসি কামরুল ইসলামকে। এর এক মাসের মাথায় ২ এপ্রিল আবারও একই পদে বহাল করা হয় তাকে। এরপর তিন মাস ওসির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে তাকে বদলি করে জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) আনা হয়। পরবর্তীতে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট ইয়াবা পাচারের মামলাটি পুনঃতদন্ত করে আগামী দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে পুনঃতদন্তে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সাবেক ওসি কামরুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় দেড় মাস আগে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে (চার্জশিট) প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই মামলায় গত ২২ অক্টোবর সাবেক ওসি কামরুল ইসলাম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) মো. মাহবুবুল আলম এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ইয়াবা মামলায় পরিদর্শক পদমর্যাদার অফিসার সদর থানার সাবেক ওসি কামরুল ইসলাম কারাগারেই আছেন।

কামরুল ইসলাম বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে নেই জানিয়ে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিআইও-১) কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, কামরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ থেকে অন্যত্র পোস্টিং পেয়েছিলেন। বর্তমানে কোথায় আছেন জানি না। তবে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে নেই।