ইসলামী ব্যাংক ও ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যানের পদত্যাগ

:
: ৬ years ago

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক সচিব আরাস্তু খান। গভর্নর ফজলে কবিরকে অবহিত করে তিনি পদ ছেড়েছেন। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে সাবেক সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামও পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ থাকলেও কিছু বিষয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়া এবং ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের খরচ নিয়ে মতবিরোধের জেরে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

সভা থেকে ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল হাসানকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আরেক স্বতন্ত্র পরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজালকে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তিনি সরকারের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক।

একসময় ইসলামী ব্যাংকের কর্তৃত্ব ছিল যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের হাতে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি ব্যাংকটির মালিকানায় পরিবর্তন আসে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর মূল কর্তৃত্ব যায় চট্টগ্রাম ভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের হাতে। তখন ব্যাংকটির দায়িত্ব পান সাবেক সচিব আরাস্তু খান। ওই সময় ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের সব কমিটিতে পরিবর্তন আসে। এমডি পদ থেকে মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে সরিয়ে এস আলম গ্রুপের কর্তৃত্বে পরিচালিত ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মো. আবদুল হামিদ মিঞাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি আবদুল হামিদ মিঞার মেয়াদ শেষে নতুন এমডির দায়িত্ব পান ব্যাংকের ডিএমডি মো. মাহবুব-উল-আলম।

জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, ‘ঋণ বা অন্য কোনো ঝামেলার জন্য নয়, ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। এটা অনেক বড় ব্যাংক। অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমি পেরে উঠছিলাম না। যে কারণে পদত্যাগ করেছি।’

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগের আগে গভর্নরকে একটু অবহিত করতে গিয়েছিলাম।’

দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। বর্তমানে ব্যাংকটিতে প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে। বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা। মূলধন রয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। গত বছর ব্যাংকটি নিট ৬২৪ কোটি টাকার মুনাফা করে। আগের বছর নিট মুনাফা হয় ৫২৯ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মুনাফার বড় একটি অংশ ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়।

জানা গেছে, মঙ্গলবারের বৈঠক থেকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মতিনকে সরিয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ পদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

ব্যাংকটির ১৯ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির পদটি খালি রয়েছে। বর্তমানে অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন বিডিবিএলের সাবেক এমডি ড. মো. জিল্লুর রহমান। পরিচালকদের মধ্যে পাঁচজন রয়েছেন স্বতন্ত্র। বাকিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংকটির শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তাকে অপসারণ করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন- ব্যাংকের এমডির পরের পদে থাকা অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মো. শামসুজ্জামান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এফসিএ, আবদুস সাদেক ভূঁইয়া ও মোহাম্মদ মোহন মিয়া এবং সিনিয়র এপিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) আমিরুল ইসলাম।

গত বছরের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তনের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলমকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। তবে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ব্যয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যসহ কিছু ঘটনার পর আহসানুল আলম পদত্যাগ করেন। তার জায়গায় দায়িত্বে আনা হয় দুদকের সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে। বর্তমানে তিনি এবং সৌদি আরব ভিত্তিক আল-রাজী গ্রুপের প্রতিনিধি ইউসিফ আবদুল্লাহ আল রাজী ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। ইউসিফ আবদুল্লাহসহ ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে বর্তমানে তিনজন বিদেশি রয়েছেন।