ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সাম্প্রতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে খোদ ইসরায়েলের ভেতরেই। এতে অংশ নিচ্ছেন ইসরায়েলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি নাগরিকরা। তবে এর জন্য কম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না তাদের। দখলদারিত্বের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ব্যাপক ধরপাকড় আর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের দাঙ্গাবাজ আখ্যা দিয়ে রীতিমতো বেছে বেছে মারধর করছে উগ্র ইহুদিবাদীরা। তবে এই প্রতিবাদে ইসরায়েলের বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে পাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলে সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করছে তারা।
কমিউনিস্ট পার্টি অব ইসরায়েলের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, রমজান মাসের শেষের দিকে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবের প্রতিবাদে বিশ্বের অনেক দেশের মতো ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরেও বিক্ষোভ হয়। সেখানে হাইফা, নাজারেথ, জাফফা, অ্যাকর, লডের মতো শহরগুলোতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু এসব বিক্ষোভে মারাত্মকভাবে চড়াও হয় পুলিশ। এতে আহত হন অনেকে, গ্রেফতার করা হয় অসংখ্য প্রতিবাদকারীকে। এর মধ্যে শুধু মে মাসের ১১ তারিখেই গ্রেফতার করা হয় দেড় শতাধিক বিক্ষোভকারীকে। তবে এ ধরনের দমন-পীড়নে বিক্ষোভ দমেনি, বরং তা আরও গতি পেয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে ইসরায়েলকে লক্ষ্য হামাসের টানা রকেটবৃষ্টির মধ্যেই গত ১৫ মে তেল আবিবের হাবিমা চত্বরে বিক্ষোভে যোগ দেন কয়েকশ’ মানুষ। এর আয়োজক ছিল ইসরায়েলের অন্যতম বামপন্থী দল হাদাশ ও আরব-ইহুদি জোট ‘স্ট্যান্ডিং টুগেদার’।
ওইদিন বিক্ষোভ হয় ইসরায়েলের আরও কয়েকটি শহরে। তবে জেরুজালেমের বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতার করা হয় হাদাশ সদস্যসহ অন্তত ছয়জনকে। এছাড়া জাফফা শহরে প্রতিবাদে শামিল হন কয়েকশ’ মানুষ।
শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে হাদাশ নেতা আয়মান ওদেহ বলেন, আমরা এখানে এটা প্রমাণ করতে এসেছি যে, এই লড়াই কোনো মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের নয়, এক ধর্মের বিরুদ্ধে আরেক ধর্মেরও নয়। এই লড়াই রাজনৈতিক। এটি যারা দখল ও আধিপত্য চায় তাদের সঙ্গে যারা শান্তি ও সমতা চায় তাদের লড়াই।
এসময় আরেক বামপন্থী নেতা ইবতিসাম মারা’য়ানা-মেনুহিনও অনেকটা একই সুরে বলেন, এটি যারা আমাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আরও ধ্বংস মানে আরও বিধবা নারী। আমরা এভাবে চালিয়ে যেতে পারি না।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে হওয়া অন্যায় স্মরণে পালিত নাকবা দিবসে শাখনিন শহরের এক জনসভায় ইসরায়েলি কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মুহাম্মদ বারাকাহ বলেন, নেতানিয়াহুর জংলি উস্কানি, গ্রেফতার এবং সামরিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টার বিরোধিতায় আজ হাজার হাজার মানুষ এখানে সমবেত হয়েছে, যা ইতোমধ্যে লড, কাফর কান্না এবং জাদেদা-মাকরে শুরু হয়ে গেছে।
ইসরায়েলি ভূমিতে প্রায় ১৬ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করেন, যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের মতো। কিন্তু গত এক যুগ ধরে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর শাসনামলে ইসরায়েলের সবচেয়ে অরক্ষিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছেন এই মুসলিমরা।
এ অবস্থায় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ইসরায়েলে আরব নাগরিকদের স্বার্থে গঠিত হাই ফলো-আপ কমিটির চেয়ারম্যান ও বামপন্থী নেতা মোহাম্মদ বারাকাহ। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমাদের সম্প্রদায়ের সুরক্ষা এবং মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক মহলের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা উচিত।