বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলামকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর ঘটনায় দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়িকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শহীদ দেওয়ানকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। দাফতরিক আদেশটি মঙ্গলবার (০৯ জুন) বিকেলে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পৌঁছায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিযুষ চন্দ্র দে বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে চিঠিটি আমাদের হাতে এসেছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইউএনও পিযুষ চন্দ্র দে আরও বলেন, সিকদার বাড়ি মসজিদের ইমাম ও দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী শহিদুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করেছেন বরখাস্তকৃত মোস্তফা রাঢ়ি ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শহীদ দেওয়ান। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি ও জুতার মালা পরিয়ে ইমামকে ঘোরানো হয়। সেই সঙ্গে ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এসব অভিযোগ তদন্ত করা হয়। তদন্তে ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় বরিশাল জেলা প্রশাসক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পাশাপাশি কেন তাদের চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হবে না- এই মর্মে শোকজ করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শোকজের জবাব স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলামকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি। এ মামলার আরেক আসামি শহীদ দেওয়ান আত্মগোপনে রয়েছেন।
৩ জুন এক ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সালিশ বসিয়ে শহিদুল ইসলামকে মারধর করে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং মাথার টুপি খুলে তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে স্টিমারঘাট বাজারে ঘোরানো হয়। বিষয়টি চেয়ারম্যানের লোকজন মোবাইলে ধারণ করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে ভাইরাল হয়। বিষয়টি পুলিশের নজরে আসার পর গত বুধবার চেয়ারম্যানসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। ওই মামলায় এ পর্যন্ত চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দড়িচর খাজুরিয়া মাদরাসার একাধিক শিক্ষক জানান, ২০১৯ সালে উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল হিসাব নম্বর পাঠানো হয়। তালিকা পাঠানোর সময় ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী মাদরাসায় না আসায় সেখানে শহিদুল ইসলাম তার মোবাইল নম্বর দিয়ে দেন। সম্প্রতি ওই ছাত্রীর এক বছরের উপবৃত্তির ১৮০০ টাকা ওই মোবাইল নম্বরে জমা হয়। বিষয়টি শহিদুল ইসলাম ওই ছাত্রীর অভিভাবককে জানাতে ভুলে যান।
বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি ৩ জুন সকালে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিশ ডাকেন। সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হলে শহিদুল ইসলামকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে ২০ হাজার টাকা মাফ করে বাকি ৫০ হাজার টাকার জন্য চাপ দেন। শহিদুল ইসলাম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো হয়।