ইমরান খানকে গ্রেফতারের ‘প্রতিজ্ঞা’ পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করতে প্রতিজ্ঞা করেছেন দেশটির বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। রোববার (১ মে) তিনি বলেছেন, মসজিদে নববীতে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও তার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যা হয়েছে, তার কোনো ক্ষমা নেই। খবর জিও নিউজের।

মসজিদে নববীর ঘটনাকে ‘ফিতনা’ বা ‘গৃহযুদ্ধ’র সঙ্গে তুলনা করে সানাউল্লাহ বলেন, তারা যা করেছে, তা কিছুতেই ক্ষমা করা হবে না। ইমরান খানকে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে।

ওই ঘটনায় ইমরানসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাসূল (স)-এর রওজার পবিত্রতা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা না করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, এ বিষয়ে যে কেউ এগিয়ে এসে ব্যবস্থা নিতে চাইলে সরকার বাধা সৃষ্টি করবে না।

সানাউল্লাহর ভাষ্যমতে, পবিত্র মসজিদটিতে পিএমএল-এন নেতাদের হয়রানির ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। এটি করতে মানুষজনকে উসকানি দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মসজিদে নববীতে গুণ্ডামি করার জন্য আনিল মুসারাত ও সাহেবজাদা জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একদল লোক যুক্তরাজ্য থেকে সৌদি আরবে পৌঁছায়।

এদিন ইমরান খানকে কটাক্ষ করে সানাউল্লাহ বলেন, এই লোকটি নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে উদ্যত। আর কেউ কি কখনো চাঁদরাতে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে?

মসজিদে নববীর ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে শাহবাজ সরকারের এ মন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, শেখ রাশেদের সংবাদ সম্মেলনের পর প্রমাণের কি আর দরকার রয়েছে?

পাকিস্তানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি সরকার। তারা কিছু লোককে শিগগির পাকিস্তানে ফেরত পাঠাবে।

এর আগে, মদিনার পবিত্র মসজিদে নববীতে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে ‘চোর চোর’ স্লোগান ও হট্টগোলের ঘটনায় ইমরান খানসহ ১৫০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের হয় পাকিস্তানে। তাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি ওমরাহপালনকারীদের হয়রানি ও ধর্মীয় কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে ইমরান-ঘনিষ্ঠ সাবেক এক মন্ত্রীর ভাতিজাকে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ জানিয়েছে, রোববার (১ এপ্রিল) ফয়সালাবাদের মদিনা টাউন থানায় সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন মোহাম্মদ নাঈম নামে এক ব্যক্তি।

মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহকারী ড. শাহবাজ গিল, জাতীয় পরিষদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি, জাতীয় পরিষদের সদস্য শেখ রশিদ শফিক, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী অনিল মুসারাতসহ আরও অনেকে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মসজিদে নববীতে পাকিস্তানি ওমরাহপালনকারীদের কাজে বাধা দিতে পাকিস্তান থেকে ১৫০ জন ও লন্ডন থেকে আরও কয়েকজনের একটি দলকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল। অভিযোগকারীর দাবি, পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

সাবেক মন্ত্রীর ভাইপো গ্রেফতার
মামলার পরপরই ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমদের ভাইপো শেখ রশিদ শফিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সৌদি আরব থেকে ফিরে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

শেখ রশিদ তার ভাইপোর গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ওমরাহ পালন শেষে ফেরার পরপরই শফিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার পর বাড়িঘরে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে সম্প্রতি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন মুসলিম লীগ নেতা শাহবাজ শরিফ। সঙ্গে ছিলেন একঝাঁক মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও পরিবারের সদস্য। তিনদিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে সৌদিতে পা রাখেন তারা। পরে নামাজ পড়তে যান মসজিদে নববীতে। কিন্তু সেখানে অনভিপ্রেত ঘটনার সাক্ষী হতে হয় শাহবাজদের। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের দেখেই তুলকালাম শুরু করেন একদল পাকিস্তানি ওমরাহপালনকারী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, মহানবী (স)-এর মসজিদে শাহবাজ ও তার সঙ্গীদের দেখে ‘চোর চোর’ স্লোগান শুরু করেন একদল পাকিস্তানি। আরেক ভিডিওতে মসজিদের ভেতর পাকিস্তানের নতুন তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী শাহজাইন বুগতির উদ্দেশে কিছু লোককে গালিগালাজ করতে দেখা যায়। অন্য একটি ভিডিওতে এক হজপালনকারীকে বুগতির চুল পেছন থেকে টেনে ধরতে দেখা যায়।

মসজিদে নববীর মতো পবিত্র একটি জায়গায় এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় নেতা।

ক্ষমতাসীনদের অভিযোগ, এর জন্য ইমরান খানের দল পিটিআই দায়ী। তবে ইমরান খান বলেছেন, এটি বর্তমান সরকারেরই ‘কর্মফল’।