ইতিহাস বদলে রামদিন-পোলার্ডের ভূমিকায় এবার তামিম-সাকিব!

:
: ৬ years ago

ইংরেজিতে বলা হয় ‘হিস্ট্রি রিপিটস ইট সেল্ফ’। যা বাংলা করলে দাঁড়ায়, ইতিহাস আপনাআপনি ফিরে আসে। আবার কেউ কেউ ‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিও’ বলে থাকেন।

আজ গায়েনার প্রোভিডেন্সেও কি ইতিহাস আপনা আপনি ফিরে আসবে? নাকি নতুন ঘটনার জন্ম হবে? যারা ইতিহাস আর পরিসংখ্যান নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তারা নতুন ইতিহাসের স্বপ্নে বিভোর। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০১৪ সালের ২০ আগস্ট সেন্ট জর্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে হেরেছিল মাশরাফির দল।

অতি কাকতালীয়ভাবে আজ গায়েনায় প্রথম ব্যাট করলো মাশরাফির দল। আরও মিল আছে। মন দিয়ে শুনুন! আজ যে ব্যাটসম্যান রানের খাতাই খুলতে পারেননি, ফিরে গেছেন শূন্য রানে- সেই এনামুল হক বিজয় চার বছর আগের ওই ম্যাচে অনবদ্য শতরান করেছিলেন।

ব্যাটসম্যান নামধারী প্রায় সবাই ব্যর্থতার মিছিলে অংশ নিলেও এনামুল হক বিজয় একদিক আগলে রেখে ৫০ ওভার পর্যন্ত উইকেটে কাটিয়ে অনবদ্য সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। শেষ বলে আউট হওয়া বিজয়ের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৩৮ বলে ১০৯ রানের ইনিংস। সাথে আর কেউ পঞ্চাশ দুরের কথা, তিরিশের ঘরেও পা রাখতে পারেননি। দ্বিতীয় সর্বাধিক ২৬ রান করে এসেছিল ওপেনার তামিম ও মিডল অর্ডার নাসিরের ব্যাট থেকে।

কি দারুন মিল! আজও বাংলাদেশ ইনিংসে এক সেঞ্চুরিয়ান! আগেই জানা, এবার আর এনামুল হক বিজয় নন। এবার শতরান করেছেন তামিম। স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি স্লথ ব্যাট চালিয়ে ১৬০ বলে ১৩০ নট আউট তামিম। আজ গায়নায় একজোড়া সেঞ্চুরি হয়ে যেতে পারতো।

একটু সচেতন থাকলে হয়ত সেঞ্চুরি পেয়ে যেতেন সাকিব আল হাসানও। শতরানের একদম দোরগোড়ায় গিয়ে তা ছুঁতে পারেননি সাকিব। ফিরে গেছেন ৯৭ রানে। ১২১ বলে ৬ বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংসটি হয়ত তিন রানের জন্য অপূর্ণ। তবে বাংলাদেশের আলোকে ইনিংসটি অনেক কিছু। দ্বিতীয় ওভারে ১ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গার পর অনিশ্চিত যাত্রায় শক্ত হাতে হাল ধরেন তামিম-সাকিব।

দ্বিতীয় উইকেটে তামিম-সাকিবের ২০৭ রানের বিরাট জুটিতেই শুরুর ধাক্কা সামলে স্লো পিচেও বাংলাদেশ শেষ অবধি পৌনে তিনশো পেরিয়ে ২৭৯ রানের বড় পুঁজি পেয়েছে।

চার বছর আগে ২২০ রানের মাঝারি লক্ষ্যের পিছু ধাওয়া করে শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক পর্যায়ে ৩৪ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের অর্ধেকটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ক্রিস গেইল (৩), ক্রিস অ্যাডওয়ার্ডস (১০), ড্যারেন ব্রাভো (৭), ল্যান্ডল সিমন্স (০) ও অধিনায়ক ডোয়াইন ব্রাভো (৫) ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের ১৩.১ ওভারেই ফিরে গিয়েছিলেন সাজঘরে।

এমন ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় খাদের কিনরায় দাঁড়িয়েও প্রাণপন লড়াই করেন দিনেশ রামদিন আর কাইরন পোলার্ড। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের টুঁটি চেপে ধরা বাংলাদেশ বোলাররা হঠাৎ চুপসে যান দিনেশ রামদিন ও কাইরন পোলার্ডের ব্যাটের দৃঢ়তায়।

উইকেটরক্ষক দিনেশ রামদিন আর দীর্ঘদেহী মিডল অর্ডার কাইরন পোলার্ড ষষ্ঠ উইকেটে চাপের মুখেও কি অনমনীয় দৃঢ়তাই না দেখিয়ে বসেন। ‘শীর্ষ উইলোবজদের প্রায় সবাই সাজ ঘরে। শুধু আমরা দুজনই বাকি। যা করার আমাদেরই করতে হবে’- এমন ধনুর্ভঙ্গ পণেই ব্যাট করেছিলেন ঐ দুই ক্যারিবীয়ান মিডল ও লেট মিডল অর্ডার।

তাদের ইস্পাত সমান দৃঢ়তার কাছে এক সময় নুয়ে পড়ে বাংলাদেশের বোলিং ও ফিল্ডিং। যে পেসার আল আমিন ও মাশরাফি মিলে ভেঙ্গে দিয়েছিলেন উইন্ডিজ ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড, তারাই খেই হারিয়ে ফেলেন। রামদিন আর পোলার্ড ষষ্ঠ উইকেটে ১৪৫ রানের বিরাট জুটি গড়লে ভোজবাজির মত পাল্টে যায় দৃশ্যপট।

যে ম্যাচে জয় প্রায় নিশ্চিত মনে হচ্ছিল, সেটাই পরাজয়ে রুপান্তরিত হয়। রামদিন ৯৬.৩৬ স্ট্রাইক রেটে ৭৬ বলে ৭৪ রানে সাজঘরে ফিরলেও কাইরন পোলার্ড ম্যাচ জিতিয়ে বিজয়ীর বেশে হাসতে হাসতে সাজঘরে ফেরেন। ওই দীর্ঘদেহীর ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসে ৮৯ রানের ঝড়ো ইনিংস। ১২৭.১৪ স্ট্রাইকরেটে ৭০ বলে ঐ ইনিংসটি খেলে ম্যাচের হিসেব নিকেশ, সমীকরণ একদম পানির মত সহজ করে ফেলেন পোলার্ড। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ৬২ বল আগেই পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে।

চার বছর আগে ২১৯ করে জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গের পর আজ ৬০ রান বেশি করেছে মাশরাফির দল। যা এই মাঠের গড়পড়তা স্কোরের (২২৯ রান) তুলনায় ৩১ রান বেশি। আগেরবার রামদিন আর পোলার্ড পরে ব্যাটিং করে জিতিয়ে দিয়েছিলেন ক্যারিবীয়দের। তাদের ব্যাটিং তান্ডবে ৬২ বল আগে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

তার চেয়ে আজ কিন্তু ৬১ রান বেশি করতে হবে স্বাগতিকদের। হোল্ডার বাহিনীর জন্য কাজটি কিন্তু কঠিন। এবার রামদিনও নেই। কাইরন পোলার্ডও নেই। আছেন শুধু গেইল, এভিন লুইস আর আন্দ্রে রাসেল। দেখা যাক হাত খুলে ফ্রি স্ট্রোক খেলায় অভ্যস্ত ওই তিন আক্রমণাত্মক উইলোবাজ আজ কি করেন?