এ নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, বেনজীরকাণ্ডে পুলিশ মহাপরিদর্শকের ইমেজে লাগা কলঙ্ক মেটানোসহ একাধিক বাস্তবতা বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত।
পুলিশ মাপরিদর্শকের দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে তার আগের চুক্তির ধারাবাহিকতায় ও অনুরূপ শর্তে ১২ জুলাই বা যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী এক বছর মেয়াদে পুলিশের মহাপরিদর্শক পদে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হলো। এই নিয়োগের অন্য শর্ত অনুমোদিত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে।
এর আগে গত বছরের ৯ জানুয়ারি আইজিপি হিসেবে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়েছিল সরকার।
যোগ্য চেহারা খুঁজতেই কী মেয়াদবৃদ্ধি?
পুলিশের বিভিন্ন সূত্রের দাবি, বর্তমান পুলিশপ্রধান অবসরে গেলে ১২তম ব্যাচের কোনো কর্মকর্তাকে পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হতো। ১২তম ব্যাচের প্রথম ব্যক্তি কাউন্টার টেরোরিজমের রুহুল আমিন। যিনি অতিরিক্ত আইজিপির সমমর্যাদার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল হাসানের কথাও আলোচনায় ছিল।
তবে পুলিশপ্রধান হিসেবে সরকার এই বিকল্পগুলোকে সুবিধাজনক মনে করেননি। বরং চৌধুরী আল-মামুনকে রাখাটাকেই এই মুহূর্তে সঠিক মনে করেছেন। চৌধুরী আল মামুনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ায় ১২তম ব্যাচের কেউই আর দৃশ্যত আইজিপি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর দাবি, সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীরের দুর্নীতি সামনে আসায় এবং পুলিশের কিছু কিছু দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্নীতির ঘটনায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
চৌধুরী আল মামুন চাকরিজীবনে বেশ পরিষ্কার একজন মানুষ। তাকে ঘিরে কোনো বিতর্ক নেই। সৎ, মেধাবী এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা হিসেবে তনি বাহিনীতে পরিচিত। পুলিশপ্রধান হওয়ার পরও তার সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। এসব কারণ বিবেচনা করেই চাকরির মেয়াদ বাড়লো বলে সরকারের একাধিক সূত্র মনে করছে।
বিশেষ করে বর্তমানে পুলিশপ্রধানের ইমেজ নিয়ে আলোচনা চলছে। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে তাকে দিয়ে পুলিশে শুদ্ধি অভিযানও চালনো হতে পারে। তাকে দিয়ে বেনজীরকাণ্ডে পুলিশে সৃষ্ট ক্ষত পুনরুদ্ধারেরও চেষ্টা চলবে।
চাকরিজীবনে কোন কোন দায়িত্বে ছিলেন চৌধুরী মামুন
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট (এএসপি) পদে যোগ দেন।
আবদুল্লাহ আল মামুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর সার্কেল এএসপি, সিরাজগঞ্জের রাইগনজ সার্কেল এএসপি, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ সার্কেল এএসপি, চাঁদপুরের অতিরিক্ত এসপি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিএমপি), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এএসপি, এডিসি (ডিএমপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া নীলফামারী জেলার সুপারিনটেনডেন্ট পুলিশ (ডিপি), ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (ডিসি), এআইজি (এস্টাবলিশমেন্ট) এবং ঢাকা সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ও ডিআইজি হন। অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকও (পিপিএম) পেয়েছেন।
কে হতে পারেন পরবর্তী আইজিপি
এদিকে বর্তমান আইজিপির মেয়াদ শেষে কে দায়িত্ব পাচ্ছেন, এমন আলোচনা এখন বাহিনীর ভেতরে ও বাইরে। যেহেতু মেয়াদ বাড়ানোর কারণে ১২তম ব্যাচের কেউ দায়িত্ব পাচ্ছেন না সেক্ষেত্রে নতুন মুখ কে হচ্ছেন, তা ঘিরে রয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
পুলিশের অভ্যন্তরীণ তথ্য বলছে, চৌধুরী মামুনের পর পুলিশ প্রধান হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি অতিরিক্ত আইজিপির মর্যাদায় রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার তাকে পরবর্তী পুলিশপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে চায়। এ কারণেই চৌধুরী আল মামুনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।