ইট তৈরিতে অপরাধের শাস্তি বাড়ছে

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ইট তৈরিতে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি বাড়িয়ে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বিষয়টি জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ আইনটি ২০১৩ সালের। এখানে কিছু কিছু পরিবর্তন এনে আইনটি সংশোধেনের প্রস্তাব করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া কেউ ইটভাটা চালালে আগে শাস্তি ছিল এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড। এখন এক বছরের কারাদণ্ড ঠিক রেখে জরিমানা পাঁচ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।’

খাল, বিল, নদী, খাড়ি, হাওড়-বাওড়, চরাঞ্চল বা পতিত জায়গা থেকে ইট প্রস্তুতের জন্য মাটি কাঁটলে দুই বছরের কারাদণ্ড ঠিক রেখে জরিমানা দুই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সীমার পর ইটের কাঁচামাল হিসেবে মাটির ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে ইটভাটাগুলো নির্ধারিত হারে ব্লক না করলে শাস্তির বিধান করতে পারবে। সেই শাস্তি হল দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড। আগে এই শাস্তি ছিল এক লাখ টাকা জরিমানা।’

‘ইট প্রস্তুতে মান মাত্রার বেশি সালফার, অ্যাশ, মার্কারি- এগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে তবে আগে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ছিল। এখন এক লাখ টাকা হবে।’

দেশে প্রস্তুত করা ইট অন্য কোনো দেশে পাচারের বিষয়টি আইন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া ইট প্রস্তুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে, ব্লক প্রস্তুতের ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রয়োজন হবে না। পোড়ানোর মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি হয়। এ জন্য ব্লকের ক্ষেত্রে কোনো লাইসেন্স লাগবে না।’

সংশোধিত আইনে হলো ব্রিক বা ছিদ্র যুক্ত ইট প্রস্তুতে উৎসাহিত করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘ইটে কাঁচামাল হিসেবে মাটির ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ইটভাটায় উৎপাদিত ইটের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ হলো ব্রিক বা ব্লক প্রস্তুতের নির্দেশনা জারি করতে পারবে। আগে ৫০ শতাংশ হলো ব্রিক করার নির্দেশনা ছিল, এখন রেস্ট্রিকশনটা উঠিয়ে দেয়া হল।’

‘মাটির ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে ইট বা মাটির বিকল্প উপাদানের ব্লক উৎপাদন ও ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে পারবে।’

আগে ইটভাটার জন্য পরিবেশের ছাড়পত্র নিতে হত জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এগুলো শিথিল করা হয়েছে, এগুলোর জন্য অনেকটা বিলম্বিত হয়। তবে পাহাড় বা টিলার আধ কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে।’

সংক্রামক রোগের তথ্য গোপনে জেল-জরিমানা

‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

পুরনো দুটি আইন দিয়ে সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ দুটি আইন পুনর্বিন্যাস করে নতুন আইন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘খসড়ায় ২৩টি সংক্রামক রোগের নাম দেয়া আছে। সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে আরও রোগের তালিকা প্রকাশ করতে পারবে।’

‘যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটান বা ঘটতে সহায়তা করেন বা কোনো স্থানের সংস্পর্শে আসার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি গোপন করেন তাহলে ওই ব্যক্তির এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ অপরাধে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ দণ্ড আগে ছিল না, নতুনভাবে আরোপ করা হয়েছে।’

শফিউল আলম বলেন, ‘আইনে উল্লিখিত দায়িত্ব পালনে বাধা ও নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপনের ক্ষেত্রে শাস্তি সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।’

তিনি বলেন, ‘মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিলে শাস্তি সর্বোচ্চ দুই মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। এ অপরাধগুলো হবে জামিনযোগ্য ও আপোষযোগ্য।’

সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে অনেকগুলো দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘সেটাকে মনিটর করার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া আইনে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী হবেন এই কমিটির চেয়ারম্যান। এ কমিটিতে ১৩ সদস্য থাকবেন। কমিটি বছরে কমপক্ষে দুটি সভা করবে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গাইডলাইন আছে। সেটা যতটুকু আমাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সেটা প্রযোজ্য হবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির সংক্রমণ রোগের তথ্য দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাতে অন্য কেউ আক্রান্ত না হয়।’

‘কোনো এলাকায় সংক্রমণ দেখা দিলে ওটাকে ডিফাইন করে ব্লক করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। ওই এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

নতুন আইন অনুযায়ী সংক্রমণ রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি সরকার বিশুদ্ধ বা ধ্বংস করতে পারবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে সরকার দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে। সংক্রমিত স্থান বা স্থাপনা জীবাণুমুক্ত বা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেবে সরকার। যদি কোনো স্থাপনা জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব না হয় তবে তা সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনকে জানাতে হবে। সিভিল সার্জন সেটি ধ্বংস করার জন্য মালিককে নির্দেশ দিতে পারবেন। জীবাণুযুক্ত যানবাহন প্রয়োজনে জব্দ করতে পারবে সরকার।’

যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রমক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে সন্দেহ হয় তবে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী দাফন বা সৎকার করতে হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।