#

বড় হয়ে কী হতে চাও—এমন প্রশ্নের উত্তর একেক জনের কাছে একেক রকম। শৈশব থেকে মানুষ লালন করে নানা রকমের স্বপ্ন। স্বপ্নচারী সেই মানুগুলো বিচরণ করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের পানে। প্রতিনিয়ত বুনে চলা স্বপ্নে কারো ইচ্ছে ডাক্তার হওয়ার, কারো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, আবার কারো ইচ্ছে বড় হয়ে শিক্ষক হওয়ার। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হয়। কখনো ছাড়িয়ে যায় নিজের স্বপ্নকে। স্বপ্নের চেয়ে বাস্তবে প্রাপ্তির ঝুড়িটা বড় হয়ে ধরা দেয় বাস্তবে।

তেমনই এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা শিমুল। পুরো নাম আশরাফুল ইসলাম শিমুল। যিনি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবেন। ভর্তিও হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। এ যেন স্বপ্নের সমান বড় হওয়ার গল্প! বিস্তারিত জানাচ্ছেন নোবিপ্রবি প্রতিনিধি আব্দুর রহিম—

বলছিলাম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ইনফরমেন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম শিমুলের কথা। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার দৌড়ে জিতে যাওয়া শিমুলের হঠাৎ চেপে বসলো ফটোগ্রাফির ভূত! অদম্য শিমুলকে থামায় কার সাধ্য! যে বলা সেই কাজ। নিজের মাঝে গড়ে ওঠা নতুন এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিলেন শিমুল। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েও শখের বশে হয়ে উঠলেন একজন অসাধারণ ফটোগ্রাফার।

আর অল্প সময়ে পেলেন মানুষের অজস্র ভালোবাসা। তাই হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ইঞ্জিনিয়ার শিমুলের চেয়ে ফটোগ্রাফার শিমুল বেশ পরিচিত।

শুধু কি তাই! দিনে দিনে শিমুল ফটোগ্রাফিতে ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ফটোগ্রাফি করে অর্জন করা বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার থেকে এর প্রমাণ মেলে। বর্তমানে ফটোগ্রাফার শিমুলের সেরা অর্জনের মধ্যে রয়েছে—এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-৭ এ সিঙ্গেল ক্যাটাগরিতে প্রথম, ইটিভি অনলাইন ফটো কনটেস্টে প্রথম এবং উইকি লাভ আর্থ ২০১৮ তে তৃতীয় স্থান অর্জন।

এছাড়াও জিতেছেন পিক্সমা ফটো আপলোডিং কনটেস্ট অ্যাওয়ার্ড, এগ্রিকালচার ভিউ অনলাইন ফটো কনটেস্ট বিশেষ পুরস্কার, ইভিপি মান্থলি অ্যাওয়ার্ড, ফটোক্রাউড অ্যাওয়ার্ড, পিক্সোটা অ্যাওয়ার্ড, চিজ অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পুরস্কার।

ফটোগ্রাফি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফটোগ্রাফি নিয়ে সারাজীবন কাজ করে যাবার ইচ্ছা আছে।’ আরও যোগ করলেন, ‘প্রকৃতির সৌন্দর্যের অপরূপ এই বাংলাদেশ। এই সুন্দর পৃথিবীতে অসংখ্য ভালো লাগার জায়গা আছে। সেগুলো ক্যামেরার চোখে বন্দি করার খুব ইচ্ছা।’ ফটোগ্রাফি বিষয়ে চাকরির ইচ্ছার কথাও জানালেন তিনি। কিছুটা আনমনা হয়ে বললেন, ‘যদিও বাংলাদেশে ফটোগ্রাফি বিষয়ক জব সেক্টর অতি নগণ্য। যেখানেই থাকি না কেন, ফটোগ্রাফির সাথে লেগে থাকবো। কারণ ফটোগ্রাফি আমার একটা বিশাল ভালোবাসার জায়গা।’

বর্তমানে কী নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। প্রশ্নের জবাবে জানালেন, ‘এখন পড়াশোনার পাশাপাশি যতটুকু পারি ছবি তুলতে বের হই। সময় পেলেই ছবি তুলি। বাংলাদেশের সুন্দর সুন্দর ছবি তোলার মতো জায়গাগুলোতে ছুটে যাই।’

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধারণের পাশাপাশি ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করছেন। ছোটখাটো ওয়েডিং ফার্মও আছে বলে জানালেন। এই ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করে যত টাকা পান, সেই টাকা দিয়ে ঘুরে বেড়ান আর ছবি তোলেন।

এই পথে কেন এসেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জানান, ‘এই পথে এসেছি ভালোবাসার জায়গা হতে। যখন ছবি তুলতাম; তখন প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি ভীষণ ভালোবাসা জন্মাতো। ভালোবাসাগুলো ক্যামেরা তুলতে ভালো লাগতো। আমার ঘুরতে ভালো লাগে। ছবি তুলতে হলে প্রচুর ঘুরতে হয়। তাই সবসময় সাথে ক্যামেরা রাখি, ঘুরি ও ছবি তুলি।’

এখানে কী কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে জানা গেল তার কথায়, ‘এই পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ফ্যাসিলিটি। বাংলাদেশে এখনো ফটোগ্রাফির সেক্টরে জবের ফ্যাসিলিটি নেই। তাই অধিকাংশ তরুণ ফটোগ্রাফার ফটোগ্রাফি ছেড়ে ভিন্ন ভিন্ন জবে ছুটে যাচ্ছে।’

তিনি জানান, ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন হলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়—এভাবে কয়েকজনকে প্রাইজ মানি অথবা ফটোগ্রাফি ও বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়। এটাই ফটোগ্রাফির একটা সম্মানজনক পুরস্কার। এতে ফটোগ্রাফারদের কিছু আর্থিক সহযোগিতা হয়। তবে ভালো ভালো ছবি ও ফটোগ্রাফাররাই এ পুরস্কার পায় বেশির ভাগ।

শিমুল বলেন, ‘আবার ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করলে টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু ন্যাচার, ওয়াইল্ডলাইফ, স্ট্রিট করলে টাকা-পয়সার দেখা পাওয়া সোনার হরিণের মতো। আর ছবি তুলতে হলে অনেক ঘুরতে হয়, এ জন্য টাকা-পয়সাও লাগে। ছবির কোয়ালিটি পেতে হলে ভালো ক্যামেরা বডি, ভালো ভালো লেন্স লাগে। ভালো গিয়ারের দাম অনেক বেশি। তাই টাকা-পয়সাকে আমি বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করি। এর জন্য পরিবার বলে, এতো টাকা-পয়সা খরচ করে কী লাভ? কত টাকা পেয়েছিস? শুধু তো মেডেলই দেখি, টাকা-পয়সা তো দেখি না। এমন বহু কথাই শুনতে হয়।’

এসব প্রতিবন্ধকতার সমাধান সম্পর্কে শিমুল বলেন, ‘হয়তো একসময় ফটোগ্রাফির সেক্টর তৈরি হবে। ছবি বিক্রির বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছবি কিনে নেবে। আর যদি বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান ফটোগ্রাফির জন্য অ্যাসাইনমেন্ট সিস্টেম চালু করে, তাহলে ফটোগ্রাফাররা ঘোরার সুযোগও পাবে। সেই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে। এতে ফটোগ্রাফার ও প্রতিষ্ঠান—উভয়ই লাভবান হবে। সরকার যদি ফটোগ্রাফি সেক্টর নিয়ে কাজ করে, আশাকরি প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যাবে।’

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন