ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ উপসাগরীয় দেশ ও কোম্পানিগুলোর জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তেল-গ্যাস। যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে উপসাগরীয় দেশগুলোতে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরেই তেলের বাজারে সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা তৈরি হয়, বিশেষ করে ইউরোপে। তেলের দাম বাড়ায় ও যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে উপসাগরীয় দেশগুলোর রাজস্ব আয় অনেক বেশি বাড়তে পারে।
রাশিয়া তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর তেলের দাম ব্যারেল প্রতি প্রায় ১৪০ ডলারে পৌঁছায়। যদিও এরই মধ্যে দাম কমে ১০০ ডলারের নিচে চলে এসেছে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও সিমার্কিটসের প্রধান নির্বাহী ইউসেফ আলশামারী বলেন, যদি পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে খারাপ হয় তাহলে পণ্যটির দাম নজিরবিহীনভাবে বাড়তে পারে। তাছাড়া রাশিয়া যদি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে তাহলে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হবে।
কামার এনার্জির প্রধান নির্বাহী রবিন মিলস বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ পণ্যটির দাম কোথায় গিয়ে থামবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। সম্প্রতি ওপেকের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। তবে রাশিয়ার তেল রপ্তানি যদি উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত হয় তাহলে এর দাম ১৫০ ডলার ছাড়াতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
মিলস বলেন, এমন পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশ ও কোম্পানিগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে। দাম বাড়ায় আরামকো ও এডিএনওর মতো কোম্পানিগুলো লাভবান হবে। নীতি পরিবর্তন করে তারা উৎপাদন বাড়বে। যা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। অবশ্য রাশিয়ার বাইরে সব তেল কোম্পানির রাজস্বই বাড়তে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
ব্রাসেলসভিত্তিক একটি থিংক ট্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পুরো ইউরোপ রাশিয়ান জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। ২০২১ সালে ইউরোপের মোট গ্যাসের ৩৮ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। তাই মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞার অর্থই হলো ইউরোপীয় দেশগুলোকে জ্বালানির জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে ফিরতে হবে।
শুধু তেল নয় উপসাগরীয় দেশগুলোতে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুত। যা জাহাজে পরিবহন করা সম্ভব। এসব জ্বালানির জন্য এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলো আলোচনা শুরু করেছে। তাছাড়া ২০২৩ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যার অন্যতম বিকল্প উৎস হতে পারে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো।
রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে চীন। এসময় চীন রাশিয়ার মোট রপ্তানির এক চতুর্থাংশ বা ২৭ শতাংশ তেল কেনে। এর মূল্য ছিল ৩৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও এটি চীনের মোট আমদানির মাত্র ১৬ শতাংশ।
একই বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে বিশ্বের ৪৮টি দেশ রাশিয়া থেকে ক্রুয়েড বা অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। বেলারুশ, কিউবা, কুরাকাও, কাজাখস্তান, লাটভিয়া ও স্লোভাকিয়া রাশিয়ার তেলের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। এদেশগুলো ৯৯ শতাংশের বেশি তেল আমদানি করে রাশিয়া থেকে।
এছাড়া ফিনল্যান্ড রাশিয়া থেকে ৯০ শতাংশ তেল আমাদানি করে। ৮০ শতাংশ করে আমদানি করে আজারবাইজান ও লিথুনিয়া। হাঙ্গেরি করে ৭০ শতাংশ।
এদিকে বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড ও সার্বিয়া তাদের তেলের ৬০ শতাংশ আমদানি করে রাশিয়া থেকে। অন্যদিকে চেক রিপাবলিক ও তুরস্ক আমদানি করে ৫০ শতাংশ তেল।