রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আরও একটি দিন পার হচ্ছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই সংঘাতের বলি হয়েছেন কয়েকশ বেসামরিক মানুষ। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এই অভিযান থেকে আসলে কী পেতে চান ভ্লাদিমির পুতিন?
লন্ডনের লফবরো ইউনিভার্সিটির কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক শাসন বিভাগের প্রভাষক ক্রিশ্চিয়ান নিটোইউর মতে, রুশ প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই। তিনি শুধু শোধনবাদী রাজনীতি ও অসীম ক্ষমতার মোহের পেছনেই ছুটছেন।
নিটোইউ বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের পর রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তি ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার, প্রভাব-প্রতিপত্তিতে পশ্চিমাদের সমান হয়ে ওঠা এবং ইউক্রেন, মলদোভা, কাজাখস্তানের মতো ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করা। কিন্তু ইউক্রেন পশ্চিমা বলয়ে ঢুকতে গিয়ে পুতিনের চক্ষুশূল হয়। ফলে কিয়েভে রুশপন্থি সরকার বসানোই ক্রেমলিনের সামরিক অভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্য ধরে নেওয়া যায়।
কিন্তু এই কাজটি কীভাবে করবেন পুতিন?
রুশ হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের অনেক এলাকা। ছবি সংগৃহীত
সিডনি ইউনিভার্সিটির সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক গ্রায়েম গিল বলেন, কিয়েভ দখলে নিয়ে রাশিয়া প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে একটি অন্তবর্তী সরকার গঠন করতে পারে। তবে সেই সরকারের প্রতি ইউক্রেনীয় জনগণের সমর্থন থাকার সম্ভাবনা খুব কম। এর বদলে পুতিন ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নেতৃত্বে রেখে চাপ দিয়ে হলেও রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় বাধ্য করতে পারলেই বেশি সাফল্য পাবেন।
গিলের মতে, ইউক্রেনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বহাল থাকতে পারে। তবে লুহানস্ক ও দোনেৎস্কে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন কোনো কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া কিয়েভ সরকারের সঙ্গে আলোচনা-সমঝোতা করতে সক্ষম হলেও এর কিছু প্রতিক্রিয়া অবশ্যই থাকবে। গ্রায়েম গিল বলেন, এ ধরনের আলোচনা চাপের মধ্যে হয়েছে বলে মনে করা হবে এবং সে কারণে ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী না-ও হতে পারে। পুতিনের জন্য সহজ কোনো রাস্তা নেই। অস্ত্রের জোরে ইউক্রেনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন মোটেও সহজ হবে না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ছবি সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি ওয়ার কলেজের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের গবেষণা অধ্যাপক জন আর ডেনির মতে, এই মুহূর্তে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরোধ পূর্বধারণার চেয়েও শক্তিশালী দেখা যাচ্ছে। তবে রাশিয়া এখনো তার সব শক্তি কাজে লাগায়নি।
তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত বলে, শক্তি ও সামর্থ্য উভয় ক্ষেত্রেই ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়া অনেক এগিয়ে। মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, রাশিয়া এখন পর্যন্ত তার সামরিক শক্তির ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ব্যবহার করেছে। এর মানে, তাদের আরও অনেক শক্তি ব্যহারের সুযোগ রয়েছে।
কিয়েভের পথে রাশিয়ার বিশাল সামরিক গাড়িবহর। ছবি সংগৃহীত
তাছাড়া, কিয়েভের দিকে এখন নজর রেখেছে বহু দেশ। নিটোইউ বলেন, আমার মনে হয়, পুতিনের সামনে রাস্তা খুবই কম। ইউক্রেনে কোনো ধরনের বিজয় অর্জনের ফাঁদে পড়ে গেছে রাশিয়া। চীন, ভারত, ইরানের মতো দেশগুলো সেখানে নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। রাশিয়া কিয়েভে বিজয় ঘোষণা করতে না পারলে অবশ্যই তাদের শক্তিশালী সামরিক শক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
এ অবস্থায় ইউক্রেনের মতো একটি দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুতিন কী করতে পারেন? বড় সম্ভাবনা, দেশটিকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলা। তবে সেটিও খুব একটা সহজ হবে না।
ডেনি বলেন, ইউক্রেনকে বিভক্ত করার জন্য কিছু কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন হবে, যারা বিভক্তি বাস্তবায়ন ও কার্যকর করবে। যদিও রুশ বাহিনী এই বিভক্তি বাস্তবায়ন করতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত নই যে, অল্প সময়ের মধ্যে সেটি করার মতো ক্ষমতা রাশিয়ার রয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com