একজন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা; সুস্থ, সচল আধুনিক ঢাকা’ গড়বেন। আরেকজন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ‘ঐতিহ্যের, সুন্দর, সচল, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা’ গড়বেন। আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের এ প্রতিশ্রুতিতে সায় দিয়ে নগরবাসী তাদের দুজনকে দিয়েছে ঢাকাকে সাজানোর দায়িত্ব।
আবারও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আতিকুল ইসলাম। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ফজলে নূর তাপস। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে দুই সিটির নগরপিতার দায়িত্ব পেয়েছেন আতিকুল-তাপস।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ইভিএমের (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) মাধ্যমে ভোটগ্রহণের পর ফল ঘোষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, ডিএনসিসিতে নৌকা প্রতীকে আতিকুল ইসলাম পেয়েছেন ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন পেয়েছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট। ডিএসসিসিতে নৌকা প্রতীকে তাপস পেয়েছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট।
শনিবার সকাল ৮টায় একযোগে ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ চলাকালে কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ককটেলবাজি ও সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটে ইভিএমে ভোট দেয়ার সময় জটিলতার ঘটনাও। খোদ সিইসি কে এম নূরুল হুদা এ বিড়ম্বনার শিকার হন।
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএসসিসির ফলাফল ঘোষণা শুরু হয় সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। ঘোষণা করেন ডিএসসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাতেন। অন্যদিকে ডিএনসিসির ফলাফল ঘোষণা শুরু হয় শেরেবাংলা নগরের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন থেকে। ঘোষণা করেন ডিএনসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম।
ফলাফল ঘোষণায় নিজের জয়ের আভাস পেয়ে আতিকুল ইসলাম সন্ধ্যায় বনানীতে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘আস্থা রাখুন, সুস্থ-সুন্দর-সচল-গতিময় ও আধুনিক ঢাকা উপহার দেয়ার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।’
ভোট দেয়ার জন্য নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী তাবিথ আউয়ালের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ঢাকা শহর সাজানোর জন্য আপনি যে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন ইশতেহারে, আসুন আমার ইশতেহারের সঙ্গে আপনারটা মিলিয়ে আমি-আপনি-আমরা সবাই মিলে একটি সুস্থ-সুন্দর-সচল-গতিময় ঢাকা গড়তে কাজ করি।’
আনিসুল হকের প্রয়াণের পর ডিএনসিসির মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে জয় লাভ করে ৯ মাসের মতো দায়িত্ব পালন করেন আতিকুল ইসলাম। এবারের নির্বাচনের আগের প্রচারণায় আতিকুল ওই নয় মাসকে তার অভিজ্ঞতা-অর্জনের সময়কাল বলে উল্লেখ করেন এবং এ অভিজ্ঞতায় ঢাকা সাজাবেন বলে অঙ্গীকার দেন নগরবাসীকে।
তার আগে বিকেলে গ্রিন রোডে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা উন্নত ঢাকা গড়ার যে রূপরেখা দিয়েছি সেটা ঢাকাবাসী সাদরে গ্রহণ করেছে।’
এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি-না, তা নিয়ে ভোটের আগে থেকেই সংশয় প্রকাশ করে আসা বিএনপি ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই এ ধরনের অভিযোগ করতে থাকে। দিনভর দলটির প্রার্থী ও নেতারা নানা বক্তব্য দেয়ার পর সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। এমনকি এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচনের পরিবেশকে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। বিএনপির অভিযোগকে আগেকার অভিযোগের ধারাবাহিকতা বলেও মন্তব্য করেন তারা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদে আরও ১১ জন প্রার্থী হন। এর মধ্যে ডিএনসিসিতে ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি সমর্থিত প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল, ইসলামী আন্দোলনের শেখ ফজলে বারী মাসউদ, এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান ও পিডিপির শাহীন খান। আর ডিএসসিসিতে ছিলেন জাতীয় পার্টি সমর্থিত হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুর রহমান, এনপিপির বাহারানে সুলতান বাহার, গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন ও বাংলাদেশ কংগ্রেস সমর্থিত আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ।
৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ডিএসসিসিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। আর ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ডিএনসিসিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। দুই সিটি মিলিয়ে ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৬ জন ভোটার থাকলেও নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩০ শতাংশের মতো।
গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই তফসিল অনুসারে ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন সনাতন সম্প্রদায়ের সরস্বতী পূজা থাকায় বিভিন্ন পরিসরে আলোচনার প্রেক্ষাপটে পরে ভোটগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়।