আয় বেড়েছে বরিশালের বিএনপির ৬ প্রার্থীর

:
: ৬ years ago

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ৬ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ৫২ জন। যার মধ্যে ১২ জনই বিএনপির প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১০ প্রার্থীই নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।

হলফনামার হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে অনেকেরই স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। একইসঙ্গে অনেকেরই বেড়েছে বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ। তবে এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ শহিদুল হক জামাল, মেজবাউদ্দীন ফরহাদ ও আবুল হোসেন খানের আয় কমেছে। আর সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী হওয়ায় তার কোনো আয়ই দেখানো হয়নি হলফনামায়।

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় প্রার্থীদের উল্লেখ করা তথ্যানুযায়ী, বরিশাল-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭০ টাকা বাৎসরিক আয় হিসেবে দেখিয়েছিলেন যা ১০ বছরের মাথায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

হলফনামা অনুযায়ী বিগত সময়ে তার অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ৪০ টাকার ও ১০ তোলা স্বর্ণ এবং তার স্ত্রীর নামে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৮৫২ টাকার সম্পদ ও ৫০ ভরি স্বর্ণ। আর বর্তমানে অস্থাবরে তার রয়েছে ২ কোটি ৯৭ লাখ ২৩ হাজার ৪৪২ টাকার সম্পত্তি ও ১০ তোলা অলংকার এবং তার স্ত্রীর নামে ৩৮ লাখ ২৪ হাজার ৮০৫ টাকার সম্পত্তি ও ৫০ ভরি অলংকার রয়েছে। এছাড়া ছেলের রয়েছে শারমিন এন্টারপ্রাইজ লিমিটিডের ৫ লাখ মূল্যের শেয়ার। যদিও তার স্থাবর সম্পদ নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামার সঙ্গে অনেকটাই স্থিতিশীল।

বিগত সময়ে অস্থাবরে ৩৮ লাখ টাকার সম্পদ ও বৈবাহিক উপহার ১০০ তোলা স্বর্ণালংকার এবং তার স্ত্রীর নামে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার সম্পদ ও বৈবাহিক উপহার ২৫ তোলা স্বর্ণালংকার দেখানো হয়েছিল। আর বর্তমান হলফনামায় অস্থাবরের মধ্যে তার রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টাকার সম্পদ ও ৪৫ তোলা অলংকার এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৩৮৯ টাকার সম্পদ রয়েছে। স্থাবরের মধ্যে বিগত নির্বাচনের হলফনামায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ১০ একর কৃষি জমি ছাড়াও তার ৪৬ লাখ ৭৭ হাজার ৩৪৭ টাকার ও তার স্ত্রীর ৮১ লাখ ১১ হাজার ৩৩৭ টাকার সম্পদ দেখিয়েছিলেন তিনি। আর বর্তমানে তার ৫৬ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬০ টাকার ও তার স্ত্রীর ১ কোটি ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৭ টাকার সম্পদ রয়েছে।

এই আসনে বিএনপির অন্য প্রার্থী আবদুস সোবাহানের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাৎসরিক আয় ছিল প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বছরে আয় ছিল প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। যেখানে তার বর্তমানে আয় প্রায় ৭ লাখ টাকা ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বছরে আয় প্রায় ৮ লাখ টাকা।

এদিকে বরিশাল-২ আসনের বিএনপির সৈয়দ শহিদুল হক জামালের বর্তমান আয় ও তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। হলফনামা অনুযায়ী জামালের বর্তমান আয় ৬ লাখ ৭৫ হাজার ২শ’ টাকা যা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল ১২ লাখ ৩২ হাজার টাকা। আর বর্তমানে তার ওপর নির্ভরশীলদের বছরে আয় ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৪ টাকা, যা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩১৪ টাকা। নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির সেলিমা রহমান পেশায় নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করেছেন। হলফনামা অনুযায়ী, ১০ বছরে তার আয়-সম্পদ উভয়ই বেড়েছে। বর্তমানে তিনি বছরে আয় করেন ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৫০ টাকা, যা নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ছিল ১২ হাজার ১৪ টাকা। যদিও সেসময় তার পেশা গৃহিনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো।

এই আসনে বিএনপির অপর প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ বর্তমানে কোনো টাকা আয় করেন না বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি বাড়েনি তার সম্পদের পরিমাণ। তবে বেড়েছে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় তিনি দুই স্ত্রীর ৪০ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং স্থাবরে ১ কোটি ৬৫ লাখ ২ হাজার ৮০০ টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে এবারের হলফনামায় তিনি স্ত্রীর নামে ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৫১ হাজার ৮৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে হলফনামায় স্থাবর সম্পদের বিস্তারিত তথ্য দেননি।

অপরদিকে ২০০৮ সালে স্থাবর সম্পদের মধ্যে তার ছিল ৫৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭৩ টাকার সম্পদ এবং তার স্বামীর ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার সম্পদ। আর এবার শুধু তার একারই ২ কোটি ৬২ লাখ ৪৫ হাজার ১৯৫ টাকার স্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে।

এদিকে ২০০৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী অস্থাবরের মধ্যে তার ছিল ১ কোটি ৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৯ টাকার সম্পদ ও তার স্বামীর ছিল ৭৪ লাখ ৬২ হাজার ৩২৩ টাকার সম্পদ। আর এবার শুধু তার অস্থাবরের মধ্যে রয়েছে ২ কোটি ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৮৭২ টাকার সম্পদ।

বরিশাল-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী ব্যবসায়ী মেজবাউদ্দীন ফরহাদের বিগত সময়ের থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার বাৎসরিক আয় কমে গেলেও বেড়েছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ।

একইভাবে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের আয়ও বিগত সময়ের থেকে বেড়েছে। ২০০৮ সালের হলফনামায় তার আয় দেখানো হয়েছিল ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৮ টাকা এবার তার আয় দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩ টাকা। আর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে।

বরিশাল-৫ সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যবসায়ী মো. মজিবর রহমান সরওয়ারেরও আয় বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় তার বাৎসরিক আয় ছিল ৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা বর্তমানে তার আয় ১০ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৮ টাকা। এছাড়া বর্তমানে তার ২ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকার অস্থাবর সম্পদ ও ৫০ তোলা সোনা এবং ৩ কোটি ৩০ লাখ ২৭ হাজার ৪২৬ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। ২০০৮ সালে অস্থাবরে তার নিজের ১ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭৫ টাকার সম্পদ ও উপহারপ্রাপ্ত ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার এবং স্থাবরে তার নামে ৩ কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজার টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছিলো।

বরিশাল-৬ আসনে বিএনপি প্রার্থী ব্যবসায়ী আবুল হোসেন খানের বিগত সময়ের থেকে বর্তমানে বাৎসরিক প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় কমলেও বেড়েছে তার ও তার স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ। বর্তমানে তার ১ কোটি ৩৬ লাখ ২ হাজার ৮৭৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং তার স্ত্রীর নামে ২৭ লাখ ৪২ হাজার ৮৪২ টাকার অস্থাবর সম্পদ ও ১০ তোলা স্বর্ণালংকার রয়েছে। ২০০৮ সালে হলফনামা অনুযায়ী আবুল হোসেনের ছিল ৭৭ লাখ ১১ হাজার ৭০০ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং তার স্ত্রীর নামে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৭৬ টাকার সম্পদ ও ৩০ তোলা স্বর্ণালংকার রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে প্রার্থীর নিজের নামে ২ শতক পৈত্রিক সম্পত্তি ও ১ কোটি ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ১২৯ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং প্রার্থীর স্ত্রীর নামে ৩২ লাখ ১২ হাজার ৫শ’ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। অন্যদিকে ২০০৮ সালে প্রার্থীর নামে ১ কোটি ২৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯২০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং তার স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ ছিল।

এই আসনে বিএনপির অপর প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রশীদ খান বর্তমানে পেশায় আইনজীবী। বর্তমানে তার বাৎসরিক আয় ১২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। যা ২০০৮ সালের হলফনামায় ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরের মাথায় তার আয় বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। পাশাপাশি বেড়েছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণও।

১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে প্রার্থীর নিজের এবং তার স্ত্রীর ১৮ লাখ টাকার সম্পদ ও বিবাহকালীন ১০ ভরি অলংকার রয়েছে। পাশাপাশি স্থাবর সম্পদে ৪ লাখ টাকার একটি বাড়ি ও আড়াই লাখ টাকার জমি রয়েছে প্রার্থীর নিজ নামে, এছাড়া স্ত্রীর নামে ৪৬ লাখ টাকার জমি ও দালান এবং নির্ভরশীলদের নামে ৪০ হাজার টাকা মূল্যের জমি রয়েছে।