আস্থা সঙ্কটের পরও বেড়ে চলেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। রাজধানীতে নতুন করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকার পরও নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ‘জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস’ নামের বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজধানীর গুলশানে স্থাপন করা হবে।
নতুন অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৬।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন দেয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা হিসেবে এস এম জুবাইদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীর নাম জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত এক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সেটি ইউজিসিতে পাঠানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহৃত ঠিকানা পরিদর্শন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন পাঠায় ইউজিসি কর্তৃপক্ষ।
গত ২৮ জানুয়ারি ‘জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস’ বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদনের পেছনে সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী কাজ করেছেন বলেও জানা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত শিক্ষার চাইতে অর্থ উপার্জনের ওপর বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ কমছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট কমে আসা, নতুন নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং আসন বৃদ্ধি পাওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের অযাচিত হস্তক্ষেপ, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য না থাকা, দক্ষ শিক্ষকের অভাব, সর্বোপরি শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে না পারায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। ফলে নতুন করে গড়ে ওঠা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
‘জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস’ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৬। শুধু রাজধানীতে রয়েছে ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে ৯০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। সেখানে প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে।
রাজধানীতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন প্রসঙ্গে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অবদুল মান্নান বলেন, ‘রাজধানীতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দেয়াটা ছিল সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এর পেছনে যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু নানা মাধ্যমে নতুন করে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। অনেকে উচ্চশিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছে। এসব বন্ধে আমরা নিয়মিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করছি। অনেকে আবার পাল্টা ইউজিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।’
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে অর্থ উপার্জনের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সার্টিফিকেট বিক্রি ও বাণিজ্যের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।’
এ থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভর্তি ও সার্টিফিকেট বাণিজ্য বন্ধে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কর্তৃপক্ষ আদালতে গিয়ে স্থগিত আদেশ নিয়ে পুনরায় সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তারা সচেতন হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বন্ধ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ ৪৩তম বার্ষিক প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তির হার কমার চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তির হার হ্রাস পেয়েছে। এর কারণ, শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করতে ব্যর্থ হওয়া।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০১৬ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন লাখ ৫০ হাজার ১৩০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও ২০১৭ সালে এ সংখ্যা কমে তিন লাখ ৩৭ হাজার ১৫৭ জনে দাঁড়ায়।