সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে বরিশাল শহরের দক্ষিণপ্রান্তের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতুটিতে রাতের বেলা যানবাহন চলাচল ক্রমশই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেতুটি ১৩৪টি লাইটপোস্টের সকল বাতি দীর্ঘদিন ধরে বিকল থাকার কারণে যে কোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই শঙ্কা সেতু লাগোয় বাসিন্দা ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ভবিয়ে তুলেছে।
বিষয়টি সম্পর্কে সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ অবহিত থাকলেও কার্যকরী কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। এমনকি সেতু ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করা হলে তাতেও কোন সুফল আসছে না। ফলে রাতের বেলা সেতুটির পরিবেশ ভুতুরে বলে অভিযোগ রয়েছে।
শুক্রবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- বর্তমানে কোনো বৈদ্যুতিক আলো সরবারহ নেই। সন্ধ্যার অন্ধকার নামার পর দপদপিয়া সেতু থেকে চলাচলকারী জনসাধারণ আতংক নিয়েই চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছে- আলো না থাকার সুযোগে সেতুর ওপর জমায়েত ঘটে আশেপাশের এলাকার অন্ধকার প্রিয় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী চক্রের। তাছাড়া পুলিশেরও কোনো নজরদারি না থাকার কারণে রাতের আঁধারে সেতু এলাকায় এক শ্রেণির বখাটে আর ছিনতাইকারীর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। যার ফলে দপদপিয়া সেতুতে ঘুরতে আসা বিনোদন পিয়াসীরা পায়ে হেঁটে সেতু পার হলে অথবা কেউ ছোট যানবাহনে (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, টেম্পু ও মোটরসাইকেল) যাতায়াত করলে তাদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে।
সড়ক পথে বরিশাল-ঝালকাঠি-নলছিটি- পটুয়াখালী-কুয়াকাটসহ ৫ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটে যাতায়াতের পথ দপদপিয়া সেতুতে বৈদ্যুতিক আলোহীন ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার বিরাজ করায় সাধারণ পথচারীরা গাড়ির নিচে চাপা পড়ে যে কোনো সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
এমতাবস্থায় খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে- প্রায় আড়াই বছর আগে দপদপিয়া সেতুর বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করে প্রায় আড়াই লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তার চুরি চুরি করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তি বিশেষ। এরপর থেকে বৈদ্যুতিক লাইনবিহীন সবগুলো লাইটপোস্টের আলো সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
বিষয়টি সম্পর্কে সওজ কর্তৃপক্ষ অবগত হওয়ার পর বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর (সাহেবেরহাট) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিল। কিন্তু সেতুতে আলো দিতে তখন কোন উদ্যোগ নেয়নি। এই বিষয়টি নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেকির পরে সওজ বিভাগ আলাদা লাইন টেনে মাত্র ৩০টি লাইট পোস্টে আলো সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল। তবে কিছুদিন যেতে না যেতে সেই অস্থায়ী লাইটগুলিও পুনরায় বিকল হয়ে যায়।
এই বিষয়ে দপদপিয়া সেতুতে টোল আদায়ে নিয়োজিত রাফি খান জানিয়েছেন, আমরা দপদপিয়া সেতুর ইজারা নিলেও রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা সংস্কারের দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের।
তিনি অভিযোগ আকারে বলেন- এই সেতু দিয়ে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব আয় করলেও টোল আদায়ের জন্য স্থায়ী কোনো টোলঘর বা টোল আদায়কারীসহ সাধারণ যাতায়াতকারী নারী পুরুষের ব্যবহারের জন্য সামান্য একটি বাথরুম পর্যন্ত করা হয়নি। তাই যাত্রীদের মতো আমরাও নানা দুর্ভোগ নিয়ে কাজ করছি।’
এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ সাহেদ বলেন- বিষয়টি সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। কিন্তু সেতুতে আলো ব্যবস্থা করতে যে সরঞ্জাম প্রয়োজন তা তাদের নেই। তাছাড়া পর্যাপ্ত বরাদ্দও না থাকার কারণে ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তবে ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে খুব শিগগিরই বিকল্পভাবে আলোর ব্যবস্থা করা হবে।’’