একেকটা আক্রমণ তো নয়, যেন টর্নেডো। প্রবল গতিতে ধেয়ে আসা নামগুলো এমবাপ্পে-পগবা-গ্রিজমান নয়; হারিকেন ঝড়! আর তাতেই তছনছ আর্জেন্টিনার রক্ষণ। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচে আজ কাজানে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে দিল ফ্রান্স। শেষ আটে যাওয়ার আগে এই বার্তাও দিয়ে রাখল, কেন এবার তাদের অন্যতম ফেবারিট ধরা হচ্ছে। একঝাঁক প্রতিভায় ঠাসা দলটার সামনে আজ দাঁড়াতেই পারেনি লিওনেল মেসির দল। ৪–৩ ব্যবধানটা একটু ভুলই বোঝাচ্ছে। তবু শেষ মুহূর্তের পাল্টা লড়াইটাই যা একটু সান্ত্বনা হয়ে থাকল আর্জেন্টিনার।
অথচ ১৩ মিনিটে আঁতোয়ান গ্রিজমানের সৌজন্যে পেনাল্টিতে ফ্রান্স এগিয়ে যাওয়ার পরও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আর্জেন্টিনা। খেলার একেবারেই স্রোতের বিপরীতে ৪১ মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার আচমকা শটে এগিয়ে সমতা ফিরিয়েছিল তারা। ১-১ সমতায় শেষ হওয়া অর্ধে ম্যাচে দাপটে তখনো ফ্রান্স এগিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটেই বক্সে মেসির শট ফ্লিক করে জালে জড়িয়ে দেন গ্যাব্রিয়েল মারকাদো। পিছিয়ে থাকা আর্জেন্টিনাই তখন এগিয়ে। ২-১!
কিন্তু ফ্রান্স চাপে ভেঙে পড়েনি। খেলার ধারও কমায়নি। উল্টো আর্জেন্টিনা একটু বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে গেল। আর সেই সুযোগে ৫৭ থেকে ৬৮, এই ১১ মিনিটে আর্জেন্টিনার জালে তিন গোল! ৫৭ মিনিটে পাভার সমতা ফেরালেন। এরপর এমবাপ্পে শো! ৬৪ আর ৬৮ মিনিটে এই তরুণের জোড়া গোলে ম্যাচ তখনই শেষ! ম্যাচের পরের ১৫ মিনিটে আর্জেন্টিনা যা করল, তা শুধুই গোল না খাওয়ার চেষ্টা। গোটা দুই আক্রমণ নিষ্ফলা থাকল গোলমুখে গিয়ে গড়বড় করে ফেলায়।
শেষ মিনিট কয়েক আর্জেন্টিনা মরণপণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। এই না-পারার পেছনে আছেন মেসিও। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে বক্সে একটা শট নিয়েছিলেন। সেখানেও স্কোরটা ৪-৩ হলে আর্জেন্টিনা আরেকটি অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের আশা করতে পারত। পরের মিনিটে বক্সে আবারও তাঁর বাড়িয়ে দেওয়া বলে সার্জিও আগুয়েরো ফিনিশিংটা করতে পারেননি। আগুয়েরো যখন পারলেন, ততক্ষণ ম্যাচ প্রায় শেষ। যোগ করা সময়ে মেসির লম্বা বল থেকে মাথা ছুঁইয়ে হেড থেকে ৪-৩ গোল আগুয়েরো। শেষ বাঁশির আগে বক্সের জটলায় আর্জেন্টিনা আরেকটি সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু এবার আর কেউ মার্কোস রোহো হতে পারলেন না!
কদিন আগে ৩১তম জন্মদিন উদ্যাপন করা মেসি শেষের ৭ মিনিটের খেলা আরও কয়েকটি মুহূর্তে দেখাতে পারলে ফলটা অন্য রকমও হতে পারত। কিন্তু এখানেই থেমে যেতে হলো মেসিকে। ৩৫–এ পা রেখে পরের বিশ্বকাপে আসবেন কি না, আন্তর্জাতিক ফুটবলকে এখনই বিদায় বলবেন কি না—এই উত্তরগুলো জানতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে এবারের বিশ্বকাপ এই প্রশ্নও তুলে দিল, মেসির সুবর্ণ সময় পার করে আসা এই দলটি নিজের ফুটবলকে ঢেলে না সাজালে আগামী বিশ্বকাপে থাকতে পারবে তো?