আরাকান আর্মি বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ করে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করছে। কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদী বাংলাদেশের জলসীমায় আরাকান আর্মির সদস্যরা ঢুকে বাংলাদেশের জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে আনুমানিক সাত-আট কিলোমিটার রাখাইন রাজ্যের ভেতরে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত একটি ক্যাম্পে তাদের বন্দি করে রাখা হয়। তাদের পরিবার বা নৌকার মহাজনের মোবাইল নম্বর চায় তারা। মোবাইল ফোন নম্বর না দিলে বন্দিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। ফোন নম্বর পাওয়ার পর তারাই ফোন করে জন প্রতি ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আরাকান আর্মির হাতে বাংলাদেশের সিমকার্ডসংবলিত মোবাইল ফোন রয়েছে। সেটিতে মোবাইল ব্যাংকিংও করা আছে। মুক্তিপণ পাওয়ার পর তারা জেলেদের নৌকায় করে নাফ নদের বাংলাদেশ জলসীমায় এনে আরেকটি নৌকায় তুলে দেয়। ১৭ দিন বন্দি থাকার পর গত বৃহস্পতিবার আরাকান আর্মির কাছ থেকে বাংলাদেশের ২৯ জন জেলে ও মাঝিমাল্লা ফিরে এসে এসব নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মিদের একটি ক্যাম্পে ১৭ দিন বন্দি ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী মৎস্যজীবী মাহমুদুল হাসান। গত ১১ ফেব্রুয়ারি নাফ নদী থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় তারা। তিনি বলেন, মৎস্যজীবীদের প্রথমে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী একটি বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। ৪৮ ঘণ্টা ধরে অতি সংকীর্ণ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা হয়। মূত্র ত্যাগের জন্য আমাদের শুধুমাত্র একটি বালতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো প্রকার অন্যান্য সুবিধা ছিল না। আমাদের কেবল ওয়াশরুমে নিয়ে যেত, তারপর আবার একই ঘরে বন্ধ করে দিত।
খাবারের বিষয়ে মাহমুদুল বলেন, ‘আমাদের কেবল এক মুঠো ভাত এবং সেদ্ধ কলার কাণ্ড দেওয়া হতো। কখনো কখনো শুধু মসুর ডাল দেওয়া হতো, তবে তা পচা ছিল এবং তাতে পোকা ছিল। এমনকি আমাদের দেওয়া পানি ছিল পোকামাকড় এবং সিগারেটের ছাইযুক্ত।’ মাহমুদুলের ভাষ্য অনুযায়ী, একই ক্যাম্পে কমপক্ষে ছয় জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবী বন্দি ছিলেন। অন্যদের কোথায় রাখা হয়েছে তা তিনি জানতে পারেননি।
২০ বছর ধরে মৎস্যজীবী হিসেবে কাজ করা মো. শফিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা জানি যে প্রতিদিন দুই বা তিন জন মৎস্যজীবীকে আরাকান আর্মি জোরপূর্বক আটক করে ক্যাম্পে এনে বন্দি করে রাখত। আমরা ১৭ দিন থাকার সময় অনেককে এনেছে আবার অনেককে মুক্তিও দিয়েছে।’
শফিউল্লাহ দাবি করেন, আরাকান আর্মি সাধারণত প্রতি মত্স্যজীবীর মুক্তির জন্য ১ লাখ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা অথবা ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। তাদের কাছে বাংলাদেশি সিমকার্ড ছিল এবং তারা নির্যাতনের ছবি এবং ভিডিও পাঠিয়ে পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায় করত। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণ সংগ্রহ করত, যা মূলত বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ পরিচালনা করত।
২১ বছর বয়সী মৎস্যজীবী আব্দুর রহমান যিনি ১৭ দিন আরাকান আর্মির ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের বন্দিত্বের সময় কিছু বাংলাভাষী আরাকান আর্মির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছিলেন। এর আগেও তারা বাংলাদেশের জেলেদেরকে অপহরণ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩৫ লাখ টাকা আদায় করেছে বলে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে।
এ ব্যাপারে বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, আরাকান আর্মি আমাদের জেলেদের কেবল তখনই নিয়ে যায়, যদি তাদের নৌকা তাদের এলাকা প্রবেশ করে, তবে এটি সত্য নয় যে, তারা আমাদের এলাকা প্রবেশ করেছে। আমি মনে করি, আরাকান আর্মি সক্রিয় হতে এবং স্বীকৃতি পেতে চায়, এজন্য এমন ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সুখবর হলো—আমাদের পক্ষ থেকে আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা সাড়া দিচ্ছে। যে কারণে আমরা জেলেদের ফিরিয়ে আনতে পারছি।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com