আরমানিটোলায় অগ্নিকাণ্ড : ছোট মেয়ে পরপারে, বড় মেয়ে-জামাই আইসিইউতে

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানশনের ছয়তলা ভবনের চারতলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন ইব্রাহিম-সুফিয়া দম্পতি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও মারা গেছেন ছোট মেয়ে সুমাইয়া সরকার (২০)। সুমাইয়া ইডেন মহিলা কলেজে ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মো. ইব্রাহিম সরকারের পরিবার। তার স্ত্রী সুফিয়া সরকার বাসার সবাইকে সেহরির জন্য ঘুম থেকে ডেকে তুলছিলেন। ঠিক সেহরি খাওয়ার সময় হঠাৎ চারদিকে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। ইব্রাহিম তার স্ত্রী সুফিয়া, তাদের ছেলে জুনায়েদ সরকার, বড় মেয়ে ইসরাত জাহান মুনা ও মুনার স্বামী আশিকুর রহমান আগুন লাগার খবর শুনে সবাই বারান্দায় চলে আসেন।

ইব্রাহিম-সুফিয়া দম্পতির ছোট মেয়ে সুমাইয়া সরকার (২০) সেসময় বাথরুমে ছিলেন। এরপর সবার ডাকাডাকির পরে সুমাইয়া বাথরুম থেকে বের হয়েই ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান।

সুমাইয়া-মুনাদের মামাতো ভাই ফারুক জাগো নিউজকে জানান, মুনা ও তার স্বামীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। বাকিরা দগ্ধ হননি। ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নিহত সুমাইয়ার মরদেহ মিটফোর্ড হাসপাতালে আছে। সেখান থেকে সোনারগাঁওয়ে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে। তবে বিদায়বেলায় মেয়েকে দেখতে পারবেন না ইব্রাহিম সরকারের পরিবারের কেউ।

ফারুক জানান, ইব্রাহিমের বড় মেয়ে ইসরাত জাহান মুনা ও তার স্বামী আশিকুর রহমানের বিয়ে হয়েছে মাত্র দেড় মাস আগে। এই নবদম্পতি এখন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। মুনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর আশিকুর বুয়েটে পড়াশোনা করছেন।

 

এদিকে, হাজী মুসা ম্যানশন পরিদর্শন করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। তারা ঘটনাস্থলে আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন। পরিদর্শন শেষে সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, ‘আগুনের সূত্রপাত কেমিক্যাল গোডাউন থেকে হতে পারে। এসব দোকানে কেমিক্যাল বিক্রি হতো।’

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) পিবিআই অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, হাজী মুসা ম্যানশনের নিচতলায় অনেকগুলো কেমিক্যালের দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে নিয়মিত কেমিক্যাল বিক্রি করা হতো। সেই কেমিক্যাল থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ভবনের নিচতলায় পেছনের দিকে বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তন্ময় প্রকাশ ঘোষ দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ছয়তলা ভবনে কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুনে দগ্ধ ২১ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে আছেন। বাকি ১৬ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি।

চিকিৎসাধীনদের মধ্যে মোস্তফা নামে একজন চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। ভর্তি ২০ জনের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এদের মধ্যে দু’জনের ফিজিক্যাল বার্ন।

 

আহতরা হলেন— ইব্রাহিম সরকার (৬০), তার স্ত্রী সুফিয়া সরকার (৫০), তাদের ছেলে জুনায়েদ সরকার (২০), বড় মেয়ে ইসরাত জাহান মুনা (৩০), তার স্বামী আশিকুর রহমান (৩৩), মোস্তফা (৪০), ইউনুস মোল্লা (৬০), সাকিব হোসেন (৩০), সাখাওয়াত হোসেন (২৭), সাফায়েত হোসেন (৩৫), চাষমেরা বেগম (৩৩), দেলোয়ার হোসেন (৫৮), আয়সাপা (২), খোরশেদ আলম (৫০), লায়লা বেগম (৫৫), মোহাম্মদ ফারুক (৫৫), মেহেরুন্নেসা (৫০), মিলি (২২), পাবিহা (২৬),আকাশ (২২) ও আসমা সিদ্দিকা (৪৫)।

চিকিৎসক তন্ময় প্রকাশ ঘোষ বলেন, আমাদের এখানে ২১ জন চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদের মধ্যে ২০ জনের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আশিকুর, ইসরাত জাহান মুনা, সাফায়েত হোসেন ও খোরশেদ আলম আইসিইউতে ভর্তি আছেন। মোস্তফা নামের একজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। ভর্তি ২০ জনের ১৫-২২ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। বাকি ১৬ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান এই চিকিৎসক।

এ ঘটনায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেন— ওই ভবনের নিরাপত্তারক্ষী অলিউল্লাহ, দোকান কর্মচারী রাসেল মিয়া, ভবনের চারতলার বাসিন্দা ইডেন মহিলা কলেজে ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া এবং অলিউল্লাহর কাছে বেড়াতে আসা কবীর নামে আরেকজন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে হাজী মুসা ম্যানশন নামের ওই ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগে। সকাল ৯টার পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।