আজ ১৭ই ডিসেম্বর ছিলেন বরিশালের কৃতি সন্তান দার্শনিক আজ আলী মাতুব্বরের জন্মবার্ষিকী।
আরজ আলী মাতুব্বর ১৯০০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামের দরিদ্র কৃষক এন্তাজ আলী মাতুব্বরের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
“বিদ্যাশিক্ষার ডিগ্রি আছে জ্ঞানের কোনো ডিগ্রি নেই, জ্ঞান ডিগ্রিবিহীন ও সীমাহীন”- আর তাই হয়তো নিজের এ উক্তির কারনে নতুন প্রজন্মের জ্ঞান অর্জনের জন্য নিজের মৃতদেহ দান করেছিলেন বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজে।
আরজ আলী মাতুব্বর একজন বাংলাদেশি দার্শনিক, মানবতাবাদী, চিন্তাবিদ এবং লেখক ছিলেন।
আর্থিক সঙ্কটের কারণে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স বা ডিগ্রি লাভ করতে না পারলেও গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করেন, যেখানে শুধু কোরাআন ও অন্যান্য ইসলামিক ইতিহাসের উপর শিক্ষা দেওয়া হতো। পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন।
তিনি নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করেন। ধর্ম, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তার লেখায় উঠে এসেছে।
আরজ মঞ্জিলতার ৮৬ বছরের জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন পড়াশোনা করে। জ্ঞান বিতরণের জন্য তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’।
আর এই দার্শনিকের দান করা মরনোত্তর দেহটির কোন সন্ধান এখন কেউ দিতে পারলেও আজ তার জন্মদিন।
তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্যপদ, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ লেখক শিবিরের হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার ও ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর (বরিশাল শাখা) সম্মাননা লাভ করেন।
বরিশালের এই কৃতি সন্তানের জন্মবার্ষিকী হলেও আজ বরিশালে তার স্বরণে তেমন কোন আয়োজন দেখা যায় নি। তার নিজ বাড়ির আরজ মঞ্জিলে স্মরণ সভার আয়োজন করেছিলেন গণণাট্য সংস্থা এছাড়া তার পাঠাগারের উদ্যোগেও ছিলোনা কোন আয়োজন।
আরজ মঞ্জিলের লাইব্রেরিয়ান শামিম মাতুব্বর বলেন, গননাট্য সংস্থার আয়োজনে পাঠাগারে আলোচনা সভার আয়োজনে করা হয়েছিলো কিন্তু আমাদের পাঠাগার কিংবা কল্যান ট্রাস্টের কোন আয়োজন ছিলোনা।
কেন আয়োজন ছিলোনা এমন প্রশ্নের জবাবে দায়সাড়াভাবে তিনি বলেন, আসলে আরজ আলী মাতুব্ব কল্যাণ ট্রাষ্টের সভাপতি ডিসি সাহেব, তিনি কোন উদ্যোগ নেই নি, তাই কোন আয়োজন হয় নি।
কবি ও সাংবাদিক সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, আরজ আলী মাতুব্বর শুধু আমাদের বরিশালেই নয় আমাদের দেশের একজন গুণী ব্যক্তি। তাকে আমরা স্মরণ করতে পারিনি এটি আমাদের ব্যর্থতা। আমরা যদি এখনই তাদের ভুলে যাই তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম এই গুণীজনদের সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না।