প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। ইতোমধ্যে ৩৫ লাখ মানুষ ঘর পেয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আরও ৪০ লাখ মানুষ ঘর পাবে।
শনিবার (১১ মার্চ) বিকেলে ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর আ.লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে জনসভাস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বেলা ৪টার দিকে নেতাকর্মী সমর্থকে কানায় কানায় পূর্ণ জনসভাস্থলে বক্তব্য দিতে ওঠেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে মানুষকে আমরা বিনে পয়সায় করোনার টিকা দিয়েছি। তা এখনও দিয়ে যাচ্ছি। ময়মনসিংহ চমৎকার একটি বিভাগ, যেখানে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি-খাদ্য উৎপাদন সবকিছুতেই এগিয়ে যাবে। আমরা ময়মনসিংহ বিভাগ করেছি। যদি করোনা না হত, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ না থাকত তাহলে হলে এই বিভাগের কার্যক্রম আরও উন্নত হত।
তিনি বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাবা মা ভাই সবাইকে হারিয়েছে। শুধু মানুষের কথা চিন্তা করে এখনও কাজ করে যাচ্ছি। বিভাগ হিসেবে ময়মনসিংহে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় হবে। আমরা তা করে দেব। মানুষের জন্য আমাদের কাজ করাই মূল লক্ষ্য।
সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি-জামাতের আমলে এই অঞ্চল সন্ত্রাসের জনপদে লিপ্ত ছিল। লুটপাট সন্ত্রাস, বাংলা ভাই সবই বিএনপির। তাদের সময় সাক্ষরতার হারও কম ছিল। বিএনপি নেত্রী উর্দু ছাড়া কোনও বিষয়ে পাস করেনি। জিয়াউর রহমান ম্যাট্রিক পাস। তার ছেলে কোনও এক জায়গা থেকে একটি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে শিক্ষিত হয়েছে। এজন্য তারা শিক্ষার-দীক্ষায় অমনোযোগী। আজকে সাক্ষরতার ৭৫ শতাংশের ওপরে। সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন, তা আ.লীগ সরকার দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন ওয়াই-ফাই এসেছে। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ। স্কুলগুলো আধুনিকায়ন হচ্ছে। পাঁচ হাজার ২৭২টি ডিজিটাল ল্যাব করে দেওয়া হয়েছে। আজকে ঘরে বসেই ছেলেরা অনলাইনে আয় করতে পারছে। যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য বেসরকারিভাবে অনেক সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে।
আমরা ঘরে ঘরে ভাতা দিয়েছি। আমরা চাই দেশের প্রত্যেকটা মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়। ২০০১ সালে লুটেরার বিএনপি আসায় সব লুটে খায়। তাদের সময়ে খাদ্য ঘাটতি ছিল। আল্লাহর রহমতে এখন আর খাদ্য ঘাটতি নেই। এক কোটি মানুষকে আমরা মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারার সুযোগ করে দিয়েছি। অনেককে ১০ টাকা কেজিতে চাল দিচ্ছি। আবার যাদের একেবারে সামর্থ্য নেই তাদের বিনামূল্যে চাল দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই, কোনও মানুষ কষ্ট না পাক। গবেষণার মাধ্যমে সবজিসহ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। খাদ্য ঘাটতি দূর করতে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী থাকবে না। নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। যাতে করে আমাদের কারও কাছে হাত পাততে না হয়। আমাদের মাটি উর্বর তাই আমরা নিজেরা ফসল ফলাব। আমার নিজের সব অনাবাদী জমি চাষের আওতায় এনেছি। মূল কথা হচ্ছে, উৎপাদন বাড়াতে হবে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। সেখানে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। বিনা জামানতে যুব সমাজকে লোন দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে তারা অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি বলে বাংলাদেশটাকে নাকি আমরা ধ্বংস করে দিচ্ছি। এই যে এতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করলাম এগুলো ধ্বংসের নমুনা কি? তা আপনারাই বলুন। তারা তো এতিমদের টাকা মেরে খায়। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলমান। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াই তারা এসে কমায়। আমরা প্রতিটি ঘর আলোকিত করতে চাই। আমরা যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ না করতাম তাহলে তারা এতকিছু বলতে পারত না। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। তা আমাদের ধরে রাখতে হবে। এখন আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ করার।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামূল আলমের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ অন্যরা।