আমি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি: ক্রিকেটারদের ধর্মঘট প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

১১ দফা দাবিতে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের পেছনে বিশেষ মহলের চক্রান্ত দেখছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ভারত সফরকে নষ্ট করতেই এসব করার হচ্ছে বলে মনের তিনি।

ক্রিকেটারদের ধর্মঘট নিয়ে আজ (মঙ্গলবার) বিসিবিতে বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে এক জরুরি সভায় বসেছিলেন নাজমুল হাসান। সভার পর এক সুদীর্ঘ সংবাদ সম্মেলেনে এসব কথা বলেন তিনি। ক্রিকেটাররা ধর্মঘট ডাকায় বিস্মিত হয়েছেন উল্লেখ করে নাজমুল হাসান বলেন, ‘‘শকিং, আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আমাদের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে এমন কিছু হতে পারে।’’

বিসিবি প্রধান বলেন, ‘‘খেলোয়াড়রা আমাদের না জানিয়ে বিষয়গুলো সাংবাদিকদের জানিয়েছে, এতে আমি বিস্মিত। সব মিলিয়ে আমি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি।’’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘ওদের যদি কিছু বলার থাকে, তাহলে তো বলার কথাই আমাকে। ওদের বেতন বাড়িয়েছি। বিশ্বকাপের পর ২৪ কোটি টাকা বোনাস দিয়েছি। টাকার জন্য তারা খেলা বন্ধ করে দেবে? ওদের সুবিধা বাড়ানো ছাড়া তো কিছু করিনি। কিন্তু টকশো মিডিয়ার খবরে মনে হয়েছে ওদের আমরা শেষ করে ফেলেছি। এতো সম্পর্ক থাকার পরেও আমাদের কিছু বলল না কেন। এটা পূর্বপরিকল্পিত।’’
ধর্মঘটে ক্রিকেটাররা

তিনি যোগ করেন, ‘কেন আমাদের কাছে আসেনি সেটার কারণ বের করে ফেলেছি। ওরা ভারত সফরটা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এটাতে ক্রিকেটের ডেভেলপমেন্ট কি হবে এটা ওদের জিজ্ঞাসা করেন। ওরা আসলে এটার সমাধান চায় না। এখানে এমন কোনো দাবি আছে যেটা বিসিবি মানবে না বা মানতে চায় না? আমার কথাটা ভেরি সিম্পল। ওদের জন্য আমাদের দরজা সব সময় খোলা। টাকা আর ফ্যাসিলিটিস নিয়ে আমরা সব সময় ওদের সাথে একমত।’

বিসিবি প্রধান বলেন, “খেলোয়াড়রা না খেললে খেলবে না! আমাদের কিছু করার নেই। ওরা ক্যাম্পে গেলে ভালো, না গেলে যাবে না। ক্রিকেটারদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা নিজেরাও জানে না। ২-১ জন জানতে পারে। আমার দুয়ার ওদের জন্য খোলা। ওরা যদি আমার কাছে আসে, অবশ্যই কথা হবে। আমি তো কথা বলতেই চাই।”

পাপন বলেন, “দেখতে চাই কে ক্যাম্পে যাবে, কে যাবে না। কে ইন্ডিয়া ট্যুরে যাবে, কে যাবে না। এগুলো বের করতে তো হবে। আমি আশা করি ভারত সফর হবে। আমার বিশ্বাস বেশিরভাগ ক্রিকেটারই খেলতে চায়। একটু টাকার জন্য ওরা দেশের ক্রিকেটের এত বড় ক্ষতি হয় এমন কাজ করবে এটা আমার বিশ্বাস হয় না।”

পাপন তার বক্তব্যে বলেন, “ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ চালায় ক্লাবগুলো। ক্লাবগুলো দাবি জানিয়েছে যে প্লেয়ার ১২ লাখ পেত তারা ৬০ লাখ চায়। টাকা আদায় করে দিতে পারবে না আর বিসিবি। এই দাবিগুলো আমাদের কখনোই তারা বলেনি, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। নেক্সট বিপিএল শুরু হওয়ার আগেই আমরা টাকা দিয়ে দিয়েছি। ফ্রাঞ্চাইজিরা টাকা না দিলে বিসিবি দেবে। এখনও ৩ মাস সময় বাকি আছে।”

তিনি বলেন, “আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের হার ছিল অপ্রত্যাশিত। বিপিএল থেকে যেকোনো ক্রিকেটে ফিক্সিং হয়েও থাকতে পারে। শিগগির ম্যাচ পাতানোর গুমর ফাঁস করা হবে। তবে ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনার পথ খোলা আছে।”

বিসিবি সভাপতি বলেন, “আমরা কোনো পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেব না। ওরা যা চাচ্ছে তার বেশিরভাগই দিয়ে দেওয়া হয়েছে আর কিছু এখন প্রক্রিয়াধীন আছে। যখন যাতায়াত খরচ ১ হাজার ছিল তখন তারা ধর্মঘটে যায়নি, সেটা ২৫০০ করার পর অভিযোগ করলো। কম হলে বলুক আমরা বাড়িয়ে দেব। ওরা বললে টাকা বাড়িয়ে দেব। কিন্তু খেলবো না এটা কেন বলবে? না খেললে প্লেয়ারদের আর ক্রিকেটের ক্ষতি। এটার পেছনে যারা কাজ করছে তাদের লাভ হবে এতে।”

উল্লেখ্য, বিসিবি’র নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও দেশের ক্রিকেটের চলমান অসংগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে গতকাল (সোমবার) অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছেন সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। তাদের ১১ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেটে খেলবেন না বলে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে চলমান জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল)। এছাড়া আগামী মাসে ভারতে আসন্ন সফরও হুমকির মুখে পড়ে।

ক্রিকেটারদের মুখপাত্র হয়ে বাংলাদেশের টেস্ট ও টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব জানান, ‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ক্রিকেটীয় কার্যক্রমে অংশ নেবে না ক্রিকেটাররা।’#