‘আমি ব্রাজিলের জন্য দু:খিত’

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

১৯৫০ সালের ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল উরুগুয়ে। ব্রাজিলের মাটিতে ফুটবলের বিশ্বকাপ। তাদেরকে ফাইনালে হারানো ফুটবলার নিশ্চয় তাদের চিরশত্রু হবেন! আলসিয়া জিহিগগিয়া এমনই একজন। যার গোলে ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়াম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে ৮৮ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া ওই তারকা ব্রাজিলের সমর্থকদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ব্রাজিল তার দ্বিতীয় বাড়ির মতো বলেও জানিয়ে গেছেন তিনি।

২০১৫ সালে চিরবিদায় নেওয়া জিহিগগিয়া ফিফা ডটকমকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:

প্রশ্ন: ব্রাজিলে ফিরলেন (২০১৪ বিশ্বকাপে) কেমন লাগছে?

জিহিগগিয়া: এটা আমার কাছে আমার দ্বিতীয় বাড়ির মতো। আমি এখানে আসায় আমার সঙ্গে অনেকে ছবি তুলতে চাচ্ছে। আমার অট্রোগ্রাফ চাচ্ছে। এতেই আমি বুঝেছি ব্রাজিলের মানুষ এখনো আমাকে কতটা গুরুত্ব দেয়। যখনই আমি ব্রাজিলে আসি এটা আমাকে দারুণ আনন্দ দেয়।

প্রশ্ন: ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে এসে প্রথম দল হিসেবে স্বাগতিকদের হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতেন। ব্যাপারটা কিভাবে দেখেন?

জিহিগগিয়া: এটা ছিল দারুণ ব্যাপার। আর কোন দেশ আমাদের আগে স্বাগতিকদের কাছ থেকে শিরোপা জিততে পারেনি। আমরাই প্রথম। আমি ওই ম্যাচে জয় সূচক গোল করতে পেরে দারুণ ভাগ্যবান (২-১ গোলে ফাইনাল জেতে উরুগুয়ে) । আমার মতে, বিশ্বের তিনজন খেলোয়াড় ব্রাজিলিয়ানদের স্তব্ধ করে দিতে পেরেছিল। পোপে, ফ্রাঙ্ক সিনাতারা এবং আমি (ব্রাজিলের ২০১৪ বিশ্বকাপের আগে দেওয়া সাক্ষাৎকার)। পুরো স্টেডিয়ামে পিন পতন নিরবতা নেমে এসেছিল।

প্রশ্ন: আপনি এখনো ১৯৫০ সালের ১৬ জুলাইয়ের সেই গোলের কথা মনে করতে পারেন?

জিহিগগিয়া: অবশ্যই। ব্রাজিলের গোলরক্ষক বারবোসা ভেবেছিলেন আমি আমাদের প্রথম গোলের মতো পাস দেওয়ার কথা চিন্তা করছি। তিনি গোলে একটু জায়গা ছেড়ে দাঁড়ান। তখন আমি বল নিয়ে দৌঁড়াচ্ছি। সেকেন্ডের মধ্যে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। গোলে শট নিলাম এবং গোল হয়ে গেল। আমার এখনো মনে আছে গোলের পর আমি আমার পরিবার, সতীর্থ, বন্ধুদের নিয়ে কি ভেবেছিলাম। দেশকে উদ্‌যাপনের দারুণ মুহূর্ত এনে দিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: শেষ বাঁশি বাজার পরে কেমন অনুভূতি হয়েছিল?

জিহিগগিয়া: ব্রাজিলের মানুষদের কাঁদতে দেখেছিলাম। যদিও আমরা জিতেছিলাম। কিন্তু যখন দেখবেন আপনার সামনে কারো মন খারাপ আপানার ভালো লাগবে না। কিন্তু ফুটবল এমনই। অন্যের দুঃখের মধ্যেও আপনাকে আনন্দ করতে হবে। ম্যাচের আগেই ব্রাজিলিয়ানরা ভেবেছিল তারা জিতে গেছে। সংবাদপত্রের শিরোনাম খেলা হয়ে গিয়েছিল। ‘ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন’। কিন্তু সবকিছু দারুণভাবে বদলে যায়।

ফিফা: শোনা যায় খেলার পরেই আপনাদের দলের কিছু খেলোয়াড় বিয়ার খেতে বেরিয়ে যান?

জিহিগগিয়া: এটা ছিল অবদুলিও। সে ম্যাচের পরে স্টেডিয়ামের পাশেই একটা বারে যায়। সেখানে ব্রাজিলের অনেক সমর্থক তাকে চিনতে পারে। তাকে আলিঙ্গনে বাঁধে। এমনকি জিগগিয়া আমাদের বলেছিল, তার বিয়ার পানের জন্য একটা পয়সাও খরচা করতে হয়নি।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে করা আপনার গোল আর কখনো দেখেছেন?

জিহিগগিয়া: দেশে ফিরে আমি তিনটি রেডিও’র রেকর্ড পেয়েছিলাম। তাতে উরুগুয়ের ধারাভাষ্য ছিল। কিন্তু আমার স্ত্রী আমাকে তা শুনতে দিতে চাননি। সে আমাকে বলেছিল, এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাকে দুঃখিত করে তুলবে। তখন তরুণ ছিলাম। তার কথা শুনিনি। কিন্তু সে ঠিকই বলেছিল। এগুলো পরে চোখ ভাসায়।

প্রশ্ন: যখন ফুটবল মাঠের দিনগুলো মনে পড়ে কী মনে হয়?

জিহিগগিয়া: আমি নিজেকে নায়ক মনে করি। অনেকে আমাকে মায়েস্ত্রো বলে। আমি তাদেরকে বলি আমি মায়েস্ত্রো না। আমি আর দশজনের মতোই মানুষ। আমি অন্যগ্রহের না। তবে ফুটবলার হতে পেরে আমি দারুণ খুশি। ভাগ্যবান ফাইনালে গোল করতে পেরে। কিন্তু আপনি মানুষের জড়িয়ে ধরা বন্ধ করতে পারবেন না। পারবেন না তাদের ভালোবাসা রুখতে, তাদের অনুভূতি আটকাতে।

প্রশ্ন: আপনার কাছে ফুটবল মানে কি?

জিহিগগিয়া: নববধূ। আমার কাছে ফুটবল নববধূর মতো। আপনি তাকে দেখবেন, তার প্রেমে পড়বেন এবং বিয়ে করবেন। প্রথমে আপনি বলটা সম্পর্কে ভালো করে জানবেন। তা নিয়ন্ত্রনে আনতে শিখবেন এবং এটাই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসবেন।