#উদ্যোক্তা_জীবনের_গল্প
গল্পের নাম -আমার স্বপ্ন নিজেকে খুঁজে পাওয়া।
আমি মুর্শিদা সুলতানা তুলু ।
আমি একজন উদ্যোক্তা।
আমি কাজ করছি মিরপুর ২ থেকে
আমি নোয়াখালীর মেয়ে।
আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্পটা শুরু হয়েছিলো আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। ছোট ছোট চেষ্টা উদ্যোক্তা হিসেবে পথ চলা শুরু হয়েছিলো। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। ছোটবেলা থেকে অনেক স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে কিছু একটা করবো। মনে প্রবল ইচ্ছা ছিলো কিছু করার।
স্বাধীনভাবে নিজের মত চলাটা ইনজয় করতাম ছোট থেকেই। নিজের মত প্রকাশের সুযোগ খুজতাম সব সময়। আর সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে উদ্যোক্তা জীবনে আসা শুরু।
আমার উদ্যোক্তা হওয়ার জার্নিটা খুব একটা সহজ ছিল না। আমার মনে হয় উদ্যোক্তা মানেই ঝুঁকি।ঝুঁকি ছাড়া উদ্যোক্তা হওয়া যায়না। আমি প্রথমে আমার হাতের তৈরি করা কিছু আচার ও আমসত্ত্ব নিয়ে আমার উদ্যোগ শুরু করি। আমার সিগনেচার পণ্য আমসত্ত্ব।
আস্তে আস্তে আমি বিভিন্ন গ্রুপের আমার তৈরি বিভিন্ন ফলের আচার আমসত্ত্ব পোস্ট দিতে শুরু করি। এতে করে আমি আমার পণ্যের দেশ-বিদেশে ব্যাপক ভাবে অল্প সময়ে বেশ সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন গ্রুপ থেকে প্রবাসী ভাই -বোনেরা তাদের দেশি রিলেটিভ দিয়ে কয়েক কেজি করে আমসত্ত্বএবং আচার নিয়ে যেতো। এভাবে আমি অল্প সময়ে সফলতার মুখ দেখতে পেয়েছি।
তারপর আমি নিজের প্রোফাইলে আচারও আমসত্ত্ব পোস্ট দেওয়া শুরু করি। আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকি। নিজ প্রোফাইলে আচার আমসত্ত্বের পোস্ট করার পরে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং টা মজবুত হতে শুরু করে। আমি আজ আমার যে ব্রান্ডিং টুকু করতে পেরেছি সবটুকু আমার নিজের চেষ্টা দিয়ে করেছি।
এতে প্রচুর অর্ডার আসে। এখন এক হাতে কাজ সামলানো অনেক কষ্ট হয়ে যায়।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়।
আমি একবার আমসত্ত্ব তৈরি করার জন্য প্রায় ৩০মণ আম কিনি। ঐ আম রাখার জন্য ৩০০ লিটারের একটা বড় ডিপ ফ্রিজ কিনি। কিন্তু আমার বাসায় আগে থেকে বড় বড় ২টা ফ্রিজ ছিলো। ঐই আমগুলো দিয়ে আমসত্ত্ব তৈরি করি। আমসত্ত্বের টেস্ট ভালো আসেনা দেখে সব আম আমি ফেলে দিই। এতে আমার বড় ধরনের লোকসান হয়ে যায়। আমি অনেক ভেঙ্গে পড়ি। কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে সাহস ও শক্তি দিয়েছেন। আমি কখনো পণ্য নিয়ে ভয় পেলে আমার বাবা-মা আমাকে সাহস, সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমি যখন নিজের উদ্যোগে কাজ শুরু করি, ঠিক তখন থেকেই আমার মা আমাকে পরিপূর্ণ সাপোর্ট করে গেছেন। তিনি আমার প্রথম সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তিনি আমার সাহস, আমার শক্তি।
আমার উদ্যোগের প্রথম দিকে আমার হাজব্যান্ড নিজেই ডেলিভারি ম্যান হিসেবে আমার পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আমার ছেলেরা আমাকে প্যাকেজিং করতে অনেক হেল্প করেছে। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে আমার হাসব্যান্ডও বাচ্চাদের অনেক অবদান রয়েছে। তারপর আমি আমার উদ্যোগে নতুন পণ্য যোগ করেছি।
আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য যা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে কাঁসা পিতল। কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র নিয়ে কাজ শুরু করি। আমি নিজস্ব কারিগর দিয়ে কিছু ইউনিক জিনিসপত্র তৈরি করে আমি আমার প্রোফাইলে পোস্ট করি। পোস্ট করার পরে আমি ব্যাপক সাড়া পাই। তারপর আমি চাউলের গুড়ার সেমাই যোগ করি। আমের সিজনে ২০ জন কর্মী সিজোনাল আমের কাজ করেন। আর অন্য সময় আরো ১১জন কর্মী সবসময় সহযোগিতা করে আসছে। এতে করে তাদের একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এতে আমি খুবই আনন্দিত।
অন্তত সামান্য কিছু লোকের জন্য কিছু করতে পেরেছি। বর্তমানে আমার ছোট একটি আউটলেট আছে। আমি বাসা থেকেই তিন বাচ্চাকে সময় দিয়ে পাশাপাশি ই-কমার্সের মাধ্যমে আমার অনলাইন বিজনেস টাকে চালিয়ে যাচ্ছি।
আমি যখন উদ্যোগ শুরু করলাম তখন চারপাশের মানুষগুলো অনেক সমালোচনা করতো। আমি বহুভাবে মানুষের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছি। যখন উদ্যোগের প্রথমদিকে আমি আমার প্রোফাইলে আচার আমসত্ত্ব ছবি পোস্ট করি। অনেক মানুষ আমাকে নিয়ে হাসা -হাসি করতো। অমুকের মেয়ে,অমুকের বউ ফেসবুকে এসে খাবার, আচার, আমসত্ত্ব বিক্রি করে। এতে আমার খুব খারাপ লাগতো।
তখন চারপাশের হাওয়ায় ভাসা কথাগুলো শূন্যে উড়িয়ে দিতে শুরু করলাম। তারপর থেকে কোনো খারাপ লাগা নেই। জীবনটা নিজের চেষ্টায় এগিয়ে যেতে হবে নিজেকে। আমি কিন্তু কোনো ভাবেই হাল ছাড়িনি। আমার স্বপ্ন অনেক দূর যাওয়ার। বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তা হিসেবে টিকে থাকা অনেক কঠিন। কারণ একই পণ্য নিয়ে আমরা অনেকে কাজ করি। আমি মনে করি ব্যবসা মানে প্রতিযোগিতা। এতে পিছিয়ে গেলে চলবেনা। এছাড়াও আমি রান্না নিয়ে কাজ করি।হোমমেড ফুড এবং ফুডপান্ডার সাথে ও কাজ করি।
রান্নার উপর বিভিন্ন জায়গা থেকে সার্টিফিকেট ও পুরষ্কার পেয়েছি। এভাবে আমি আস্তে আস্তে সফলতার দিকে পৌঁছে যাচ্ছি। আমার প্রতি আমার আত্মবিশ্বাস আছে। সেই আত্মবিশ্বাসেই আমার এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। উদ্যোক্তা হওয়ার মাদকতা ছিলো আমার শিরা-উপশিরায়।
সফল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো এটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা যে আপনি সফল হবেন। বাধা যতই আটকে রাখার চেষ্টা করুক সফলতার বিশ্বাস মনেপ্রাণে নিয়ে নিজের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আমি মুর্শিদা সুলতানা তুলু
কাজ করি মিরপুর ২ থেকে
আমার পেইজের নাম -Ms kitchen এবং ইউনিক কাঁসা পিতলের তৈজসপত্র
https://www.facebook.com/mskitchen23?mibextid=kFxxJD
https://www.facebook.com/UKPT23?mibextid=kFxxJD