আমাদের সময়ও বড় দলকে সুবিধা দেয়া হতো : দুর্জয়

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

সাকিব ইস্যু নিয়ে গরম দেশের ক্রিকেট। সাকিবের উত্তেজক আচরণ, তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রাজ্যের কথাবার্তা এখন ক্রিকেট মহলে। পাশাপাশি আম্পায়ারিংও প্রশ্নবিদ্ধ। আম্পায়ারদের ভুল ও পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েও কম হইচই হচ্ছে না।

সবচেয়ে বড় কথা সাকিবের উইকেটে লাথি মারা এবং চরম দৃষ্টিকটূ আচরণটাও কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে। আবাহনী অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের বিপক্ষে তার লেগবিফোর উইকেটের জোরালো আবেদন নাকচ হওয়ার পরপরই কিন্তু ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাকিব এবং তাৎক্ষণিকভাবে উত্তেজিত হয়ে লাথি দিয়ে উইকেট ভেঙে ফেলেন।

সাকিবের এমন খারাপ আচরণের কারণে সব একতরফা হয়ে গেছে। না হয় আম্পায়ার ইমরান পারভেজ রিপনের ওই নটআউটের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠতো। কারণ রিপ্লে দেখে আউটই মনে হয়েছে।

তাই প্রশ্ন, সাকিব দোষ করে শাস্তি পেয়েছেন। আম্পায়াররা ভুল ও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দিয়েও কী পার পেয়ে যাবেন? আশার কথা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন এবং আম্পায়ারিং নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তা খুঁটিয়ে দেখার নির্দেশও দিয়েছেন। সেই কারণে পাঁচ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। যারা আম্পায়ারিং নিয়ে কোন দলের অভিযোগ আছে কি না তা খুঁটিয়ে দেখবেন এবং বোর্ডের কাছে রিপোর্ট করবেন।

চার বোর্ড পরিচালক জালাল ইউনুস, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, শেখ সোহেল, কাজী ইনাম এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করা রকিবুল হাসানকে দিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ওই কমিটি কী কাজ করবে? তারা কী কাজ শুরু করেছেন? তাদের কাজের ধরন কী হবে? ওই কমিটির অন্যতম সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয় সে প্রশ্নর উত্তরই দিয়েছেন।

আজ পড়ন্ত বিকেলে শেরে বাংলায় মিডিয়ার সাথে আলাপে দুর্জয় জানান, বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তাদের একটা গাইডলাইন দিয়েছেন এবং তারা সে অনুযায়ী কাজ করবেন। দুর্জয় আরও জানান, তারা কাজ শুরু করেননি, করবেন।

অভিযোগ আছে, শীর্ষ ক্লাবগুলো আম্পায়ারদের কাছ থেকে সুবিধা পায়। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক দুর্জয় মানছেন, দেশে ও বিদেশে মানে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ছোট দল বড় দলের বৈষম্য কাজ করে।

সে কারণেই তিনি ডিআরএসসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে দেশের দুই জনপ্রিয় ও শীর্ষ ক্লাব আবাহনী-মোহামেডানে খেলা দুর্জয়ের সহজ সরল স্বীকারোক্তি, ‘একটা সময় ছিল বড় দলগুলো সুবিধা পেত। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি, তখন আবাহনী, মোহামেডান, বিমান এমন বড় দলের বিপক্ষে ছোট দলের ব্যাটসম্যানদের পারলে দু-তিনবার আউট দেয়া হতো; কিন্তু সেই সময়টা তো এখন নেই। এখন প্রযুক্তি আসছে। সেই জিনিসগুলোকে যদি আমরা গ্রহণ করি তবে অনেক কিছু থাকবে না।’

তার অনুভব, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ছোট দল-বড় দলের বৈষম্য দেখা গেছে। এখন ডিআরএসের কারণে অনেকটা স্বচ্ছতা আছে। তো আমার মনে হয়, এখন যদি আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটেও এই প্রযুক্তিগুলো যুক্ত করি তবে সমস্যা অনেকটা সমাধানের পথ পাবে।’

বিসিবির এই পরিচালক মনে করেন, ক্রিকেটটাকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে আম্পায়ারিংয়ের মান উন্নত করা অতি জরুরি এবং তার মনে হয় আম্পায়ারিং উন্নত করতে চাই ভালো মানের আম্পায়ার।

এ সম্পর্কে দুর্জয়ের ব্যাখ্যা, ‘আম্পায়ারিং এমন একটা ক্ষেত্র, যেখান থেকে ক্রিকেট উন্নতি করতে পারে আবার ক্ষতিও হতে পারে। তাই আমার দিক থেকে একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে যতটা পারি, একই সঙ্গে ফেয়ার আম্পায়ারিংয়ের সঙ্গে কোয়ালিটি আম্পায়ার জড়িত। আম্পায়ারদের মানও যেন ভালো হয় সেদিকটা নজরে রাখতে হবে।’

তাদের কাজের ধরন কেমন হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে দুর্জয় বলেন, ‘এখন তো ক্রিকেটের সিস্টেমেই চালু আছে যে ম্যাচ শেষে অধিনায়ক বা টিম ম্যানেজমেন্ট আম্পায়ারিংয়ের ওপর রিপোর্ট দেবে। এখন হয়তো তদন্তে সেই রিপোর্টগুলো বের হয়ে আসবে। আমরা সেই রিপোর্টগুলোও খতিয়ে দেখব।’

পাঁচ সদস্যের কমিটি আজও কাজ শুরু করেনি, তাহলে আগামী ১৫ জুন মঙ্গলবার বোর্ড সভায় কীভাবে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে? দুর্জয়ের জবাব, ‘আমরা কাজ শুরু করি। এরপর সময় লাগলে আমরা বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে আরও সময় চাইতে পারি।’

ঘুরেফিরে আবাহনীর ম্যাচে দুই আম্পায়ারের প্রসঙ্গ উঠে এলো। সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে দুর্জয় বলেন, ‘অফিসিয়ালি কাজ শুরু করলে এ রকম যত অভিযোগই আসবে সেসব নিয়ে আমরা কাজ করবো। তাছাড়া আমরা এটাও দেখব যে কারা কোন আম্পায়ারকে কোন ম্যাচে রাখছে। এটা তো যারা আম্পায়ার ঠিক করে তাদের সাবজেক্ট। আমরা সেটাও দেখব।’