আমরণ অনশনের ঘোষণা দিলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শাহিন

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

সরকারি চাকরির নিশ্চয়তার দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ শাহিন আলম।

সোমবার (৯ মে) থেকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে এ কর্মসূচি শুরু করবেন তিনি। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

শাহিন আলম ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আলমপুর গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের ও মোছা. ফারা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। করোনাকালীন দেশ বিদেশের ১১৩ জন শিক্ষার্থীকে অনলাইনে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে সাড়া ফেলেন তিনি। অনলাইন মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ দিতে কারো কাছ থেকে কানাকড়িও নেননি তিনি।

নিজে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী; প্রশিক্ষণও দেন দেশ-বিদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের। সে সময় দেশের গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন প্রচার করলে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।

শাহিন জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন ছিলেন না। আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার জ্বর হয়। ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে জ্বর সেরে গেল। কিন্তু ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি সম্পূর্ণ হারিয়ে গেল তার। তবুও থেমে থাকেনি পড়ালেখা।

অন্য ১০ জনের মতো পড়া লেখা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে সে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেন স্থানীয় হাই স্কুলে। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত নড়াইল তুলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তি হন শাহিন। ২০১৩ সালে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে ঝিনাইদহের মহেশপুর সামছুল হুদা খান মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

শাহিন আলমের স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। কিন্তু টাকার বড় অভাব। বন্ধুদের কাছ থেকে নোট সংগ্রহ করে অন্যকে দিয়ে পড়িয়ে অডিও রেকর্ড করে নেন। ওই রেকর্ড শুনে শুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নেন। ধার-দেনা করে ভর্তি হন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার করে পড়ালেখা শুরু করেন তিনি। নিজস্ব কোনো কম্পিউটার ছিল না তার। অদম্য মেধাবী শাহিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রিসোর্স সেন্টারের কম্পিউটারে খণ্ডকালীন প্রশিক্ষণ শেষ করেন।

এরপর কম্পিউটার ব্যবহার করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে অনন্য এক দক্ষ কম্পিউটার ব্যবহারকারী হয়ে উঠেন তিনি। টিউশন ও বৃত্তির টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চলতে থাকে তার। ২০১৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। মাস্টার্স শেষ করার অপেক্ষায় আছেন।

মহামারি করোনায় রাজধানী থেকে নিজ বাড়ি চলে আসেন। বাড়িতে বসে থেকে লাভ কী? কিছু একটা করতেই হবে তাকে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিনাপয়সায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের ঘোষণা দেন। করোনাকালীন দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার চিন্তা থেকে এ উদ্যোগ নেন শাহিন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, যতক্ষণ না সরকারি চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা না পাবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব। সে শুধু নিজের জন্য নয়, দেশের সব শিক্ষিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য একই দাবি তুলেছেন।

শাহিন আলম যুগান্তরকে বলেন, সরকারি চাকরির পাশাপাশি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে কম্পিউটারে দক্ষ হবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা। তখন কারো বোঝা হবেন না। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন তারাও। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরাও দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন তিনি।