আমদানি ব্যয় বাড়ছে লাগামহীন। সেই তুলনায় বাড়ছে না রফতানি আয়। ফলে বেড়েই চলেছে বাণিজ্য ঘাটতি।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এ ঘাটতি পৌঁছেছে এক হাজার ৫৩৩ কোটি ডলারে। ঘাটতির এ অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের প্রায় দ্বিগুণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা চাপে পড়েছে। আমদনির বাড়লেই বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে আমদানি ও শিল্প পণ্যের দামে। এতে ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। চাপ সৃষ্টি হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দশম মাস এপ্রিল শেষে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারে, যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮১৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৭১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যতটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে গেছে। এ ছাড়াও শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। এসব কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে এ ঘাটতি মেটানো হয় রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে। এ খাতেও নিম্নগতি ছিল বেশকিছু দিন। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট বা বিওপি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ভালো নয় বলে মনে করছেন তারা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে আয় হয়েছে তিন হাজার এক কোটি ১০ লাখ ডলার। বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে চার হাজার ৫৩০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা বর্তমান বিনিময় হার (৮৪ টাকা) অনুযায়ী এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
আলোচিত সময়ে, আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর বিপরীতে রফতানি বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অন্যদিকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭ শতাংশ। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি বড় হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গত অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। এপ্রিলেও এ ধারা অব্যাহত রযেছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১৪৮ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের এপ্রিল শেষে ৮৫১ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল ১৭৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বিদেশিদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ৭৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর এ খাতে আয় হয়েছে মাত্র ৩৬২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ হিসাবে দশ মাসে সেবায় বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৭৭ কোটি ডলারে। যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ২৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলার।
এপ্রিল শেষে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ সামান্য বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এসেছে মোট ২৩৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৫৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও সামান্য বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের আলোচিত মাসে নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ হয়েছে ৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।