বরগুনার আমতলীর এক সাহসী কিশোরীর কথা

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago
dav

পরিবারের সদস্যরা যখন পাশে না থাকে, তখন নিজের রক্ষা নিজেকেই করতে হয়। বরগুনার আমতলী উপজেলার দক্ষিণ রাওঘা গ্রামের মজনু গাজীর মেয়ে আশামনিও (১৩) সেটিই করেছে। পরিবারের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে নিজের বাল্যবিয়ে নিজেই ঠেকিয়েছে স্থানীয় দক্ষিণ রাওঘা নুর-আল-আমিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এই ছাত্রী।

স্থানীয়রা জানান, মজনু গাজী তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে আশা মনির সঙ্গে বরিশালের লিটন (৩০) নামে এক ব্যবসায়ীর বিয়ে ঠিক করেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায়  বিয়ের সময় নির্ধারণ করেন। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন বড় মেয়ের জামাই বাদল খান, ভগ্নিপতি বাবুল মৃধা ও মামাত ভাই জসিম সর্দার। তারা বিয়ের উদ্দেশে মঙ্গলবার সকালে বরিশালে যান এবং সব আয়োজন চূড়ান্ত করেন।

গোপনে আশামনি এ সংবাদ জানতে পেরে তার চাচাত ভাই  মাহবুবুর রহমান নিপুর সহযোগিতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপস্থিত হয় আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সরোয়ার হোসেনের কার্যালয়ে। তাকে জোর করে বিয়ে দেয়ার ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে ইউএনও তাৎক্ষণিক এ বিয়ে বন্ধের উদ্যোগ নেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি চাওরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খান ও আমতলী প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. জাকির হোসেনকে সাথে নিয়ে ছুটে যান আশা মনির বাড়িতে।

আশা মনি

তারা জানান, সেখানে তিনি আশা মনির বাবা মজনু গাজী, মা লুচি বেগম, চাচা মস্তফা গাজী ও জুয়েল গাজীকে ডেকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করেন। এক পর্যায়ে আশা মনির বাবা-মা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে মেয়ের বিয়ের আয়োজনের জন্য দু:খপ্রকাশ করেন এবং আশা মনিকে আর বাল্যবিয়ে দিবেন বলে ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তারা আশা মনিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার পর বিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এসময় ওই গ্রামের অর্ধশতাধিক লোক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সবাই তখন সিদান্ত নেন তারা এখন থেকে এই গ্রামে আর কোনো মেয়ের বাল্যবিয়ে দিবেন না।

আশা মনির মা লুচি বেগম বলেন, ‘মোরা মুখ্য মানুষ, না বুইঝ্যা মোর মাইয়ার বিয়া ঠিক করছিলাম। ইউএনও স্যারে বাড়িতে আইয়া ভুল ধরাইয়া দিয়া মোগো বড় বিপদের আত থাইক্যা বাঁচাইছে। হেরে আল্লায় যেন ভাল রাহে।’

বাবা মজনু গাজী বলেন, ‘মুই মাইয়ারে এহন লেহাপরা করামু। এমএ পাশ করাইয়া বিয়া দিমু।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, না বুঝে আশা মনির বাবা-মা তাদের আত্মীয়ের সহযোগিতায় মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছিলেন। বুঝিয়ে বলার পর তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। নির্দিষ্ট বয়স না হওয়া পর্যন্ত তারা মেয়ের বিয়ে দিবেন না বলেও কথা দিয়েছেন।