আবার ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান হচ্ছেন দুর্জয়!

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

তিনি এর আগেও বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন; কিন্তু প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সাথে মতপার্থক্য ও দ্বন্দ্বের জের ধরে শেষ পর্যন্ত আর দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে থাকা হয়নি।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে নিজেই সরে দাঁড়ান নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তার বদলে আবার জাতীয় দল পরিচালনা, পরিচর্য্যা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পান জাতীয় দলের আরেক অধিনায়ক আকরাম খান।

এবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে আবারও ক্রিকেট বোর্ডে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক। সোজা-সাপটা কথা বলায় অভ্যস্ত ও তীক্ষè ক্রিকেট বুদ্ধিসম্পন্ন নাঈমুর কি তবে আবারো ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান হবেন?

হঠাৎ ছন্দপতন ঘটা জাতীয় দল পরিচালনা, পরিচর্য্যা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কী আবারো দুর্জয়ের কাঁধে বর্তাবে? দুর্জয় নিজে কী আবারো ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান হতে আগ্রহী?

আজ বিসিবি পরিচালক পর্ষদ নির্বাচনে জয়ের পর মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে দুর্জয় বলেন, ‘ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটিতে ফেরার বিষয়টি সভাপতি সাহেব বলতে পারবেন। আমি এটা নিয়ে চিন্তিত নই।’

নাঈমুর বোঝাতে চান, শুধু ক্রিকেট অপারেশন্সই নয়, সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে কাজ করার আরও জায়গা আছে। তাই তো মুখে এমন কথা, ক্রিকেট অপারেশন্সেই কাজ করতে পারবো, কিংবা অন্য কোথাও থেকে করতে পারবো না সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। সুযোগ সব সময় আছে।’

তার ভাষায় গ্রাউন্ডস ও ডেভেলপমেন্টও টেকনিক্যাল জায়গা। যেখানে ক্রিকেটার তার খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান কাজে লাগিয়ে কাজ করতে পারেন। গ্রাউন্ডস একটা বড় জায়গা।

উইকেট একেক জায়গায় একেকরকম করতে চাই। এ জায়গাটায় আমাদের টেকনিক্যাল লোক দরকার। ডেভেলপমেন্টেও টেকনিক্যাল লোক প্রয়োজন। আম্পায়ার্সদের উন্নতির ব্যাপার আছে। বয়সভিত্তিক কাজ করা যাবে, টুর্নামেন্ট কমিটি আছে, সিসিডিএম আছে। কোনোটাই কম না। সব কিছুর ফল কিন্তু জাতীয় দলে আসে।’

নির্বাচনে জেতার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নাঈমুর বলেন, ‘ভাগ্য বলেন আর প্রক্রিয়া বলেন, আমার গতবারও নির্বাচন করে আসতে হয়েছে। সেখানে জিতেছি। নির্বাচন করতেও ভালো লাগে। আর নির্বাচন করে কোথাও আসতে পারলে তৃপ্তি বেশি থাকে। ম্যানডেট নিয়ে আসার যে ব্যাপার, সেটা থাকে। নিজের অনুভুতি ভালো হয়।’

ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তিনি কোনো স্ট্যান্ডিং কমিটির দায়িত্বে ছিলেন না। এই না থাকা আবার নতুন করে দায়িত্ব নেয়া এ সব বিষয়ে কিছু বলতে বলা হলে নাঈমুর বলেন, ‘আগেও প্রথমে ছিলাম না, পরে আসছি আবার ছিলাম না। গ্যাপ ছিল। যেহেতু আমার আরেকটা দায়িত্ব আছে সংসদ সদস্য হিসেবে। অনেক সময় দিতে হয়। সেটাও একটা কারণ।’

নাঈমুরের শেষ কথা খুব পরিষ্কার। কোনোরকম ভনিতা না করে তিনি বলে ফেলেন, আসলে দায়িত্বগুলো বন্টন করেন বোর্ড সভাপতি। উনার উপর নির্ভর করে উনি আমাকে দায়িত্ব দিবেন কি না। কি দায়িত্ব, সেটা দিলে অবশ্যই করার ইচ্ছা আছে।’

তবে কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি এখনই গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্ট্যান্ডিং কমিটির দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন। আর সে কারণেই মুখে এ কথা, ‘আমার যেহেতু জাতীয় নির্বাচন কাছাকাছি। হয়ত একটা সময় আসবে আমি আমার এলাকায় বেশি সময় দিব। জাতীয় নির্বাচনের সময় বেশি ব্যস্ত থাকব। তবুও ক্রিকেট যেহেতু আমাকে সব কিছু দিয়েছে, তাই ক্রিকেটার হিসেবে ক্রিকেট থেকে দুরে থাকা খুব কঠিন। সেই ধারাবাহিকতায় আবার ইলেকশন করা।’

১৮ ভোটের মধ্যে ১৩ ভোট কি আপনার জন্য কম? নাঈমুরের জবাব, ‘আমি কম বলবো না। সব সময় সব ভোট পাবেন সেটাও কিন্তু ভাবা ঠিক না। এখানে যেহেতু প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, প্রার্থীর সংখ্যা বাড়লে ভোটের সংখ্যা কমে। প্রার্থীর কিন্তু একজন প্রোপোজার, একজন সাপোর্টার বা সেকেন্ডার থাকে। পাশাপাশি নিজের ভোটটাও থাকে। তিনটা ভোট কিন্তু এমনিতেই কমে যায়। সে ক্ষেত্রে ভোট কাটাকাটি হওয়ার সুযোগ থোকে। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণ দেখি না। কোনো ষড়যন্ত্র খুঁজছি না। এটা স্পোর্টিংলি দেখি। আমি আমার প্যানেলের সমর্থন পেয়েছি। আমার যারা কাউন্সিলর ছিল তাদেরও সমর্থন পেয়েছি।’

কাউন্সিলরদের ওপর দুর্জয়ের আস্থা ছিল। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ওই যে বললাম, যে সব কাউন্সিল বিভাগ থেকে এসে আমাকে সমর্থন করেছে। আমি যদি তাদের বিশ্বাস না করতাম তাহলে তখনই তাদের কাছ থেকে লিখিত চাইতাম; আমি কিন্তু সেটা চাইনি। আমি তাদের প্রতি সম্মান দিয়েছি।’

কোচ হাথুরুসিংহের সাথে মন কষাকষি ও মতপার্থক্যের কারণেই তিনি ক্রিকেট অপারেশন্স থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গেও আকার ইঙ্গিতে কথা বললেন নাঈমুর, ‘কারো সঙ্গে আমার কোন শত্রুতা নেই। ক্রিকেট খেলেছি, ক্রিকেট বুঝি, এজন্যই ক্রিকেট নিয়ে কথা বলি। আমরা সবাই চাই ক্রিকেট উন্নতি করুক। সেই চাওয়া থেকেই অপ্রিয় সত্য কথা বলতে হয়। কেউ যদি মনে করেন, তা ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে বলেছি, তবে তা ভুল।’