পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম আহরণ ও মজুদ ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে ইরান। দেশটির পারমাণবিক সংস্থার মুখপাত্র চুক্তির অন্য পক্ষগুলোকে হুশিয়ার বলেছেন, ‘পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ২০১৫ সালের করা চুক্তি বাঁচাতে ইউরোপীয়ান দেশগুলোর হাতে বেশি সময় আর অবশিষ্ট নেই।’
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে তেহরান তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিল। বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকার সময় ইরানের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের ছয় ক্ষমতাধর দেশের সঙ্গে চুক্তিটি স্বাক্ষর হলেও গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন।
যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর থেকে ইরান হুশিয়ার করে আসছিল যদি বাকি দেশগুলো অর্থাৎ যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইইউ কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে তারা চুক্তিতে বেধে দেয়া ইউরোনিয়াম মজুদের সীমা মানবে না। এর আগে ১০ শতাংশ মজুদ বাড়িয়েছিল দেশটি।
ইরানের পারমাণবিক সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে চুক্তিতে যে সীমা বেধে দেয়া হয়েছিল আমরা তা অতিক্রম করা শুরু করেছি। এর মধ্যে আরও দ্রুততর ও উন্নত পরমাণুও রয়েছে।’
পারমাণবিক সংস্থার মুখপাত্র আরও বলেন, ‘চুক্তিতে যেসব ইউরোপীয়ান অংশীদার আছে তাদের এটা জানা উচিত যে তাদের হতে আর বেশি সময় অবশিষ্ট নেই। যদি (চুক্তিটি জিইয়ে রাখতে) কিছু পদেক্ষপ নেয়া হয় তাহলে এটা দ্রুত করতে হবে।’
২০১৫ সালে যে চুক্তিটি হয়েছিল তাতে করে দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার শর্ত ছিল। কিন্তু গত বছর চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ইরানের ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যার মধ্যে দেশটির বড় অর্থনৈতিক খাত তেল বিক্রিও অন্তর্ভূক্ত।
গত মে মাস থেকে ইরান ইউরেনিয়াম মজুদে চুক্তিতে বেধে দেয়া শর্ত লঙ্ঘন করা শুরু করে। কেননা ট্রাম্প চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর ঘোষণা দেন ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগ করবে তার প্রশাসন। তারপর থেকেই মূলত চুক্তিটির ভাগ্য সুতোয় ঝুলতে শুরু করে।
ইরান বলছে, তারা চুক্তি লঙ্ঘন অব্যাহত রাখবে যদি ইউরোপীয় পক্ষগুলো তাদের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের আরোপিত প্রধান প্রধান নিষেধাজ্ঞা বাতিলে কোনো পদেক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে তাদের তেল বিক্রির ওপর যুক্তরাষ্ট্র যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেগুলো।
২০১৫ সালের জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশ (জেসিপিএ) নামের চুক্তিতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি বেঁধে দেয়া হয়। চুক্তিতে বলা হয়, ইরান ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ পরিমাণ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম আহরণ করতে পারবে।
চুক্তির আগে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ২০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। চুক্তিতে ১৫ বছরের জন্য ইরান নিম্নমানের ইউরেনিয়ামের মজুত ৩০০ কেজিতে সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছে।