আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে তারকাদের সমর্থন

:
: ৬ years ago

নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীতে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় বন্ধু-সহপাঠি হারানোর ব্যাথায় আক্রান্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন সারা দেশের মানুষ। তারকা-অভিনয়শিল্পী, নির্মাতাদের মধ্যেও অনেককে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থন জানাতে। তাদের নায্য দাবী মেনে নেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন অনেকেই। শিক্ষার্থীদের পরামর্শও দিয়েছেন অনেকেই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লাগাম টানুন। গরু-ছাগল চেনা ঘোড়াগুলো ক্ষেপে গেছে। তারা মানুষ চিনছে না। রাস্তায় রক্তের দাগ, সেই রক্তের দাগ মাড়িয়ে আপনার সুরক্ষিত গাড়িবহর ছুটে যায়। আপনার অজান্তেই হয়তো আপনার গাড়ির চাকায় লেপ্টে যায় কোনও এক নিষ্পাপ শিশুর রক্ত। শিশুর রক্ত মাড়িয়ে যাওয়ার মতো মানুষ তো আপনি নন। এ দায় তবে কেনো আপনাকে বহন করতে হবে। ক্ষ্যাপা ঘোড়াগুলোর লাগাম টানুন।’- নিজের ফেসবুকে এভাবেই স্ট্যাটাস লিখেছেন নাট্যকার মাসুম রেজা। পরবর্তীতে আরেকটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি আরও লিখেছেন-‘শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করবেন না। দাবি মেনে নিয়ে ওদের নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরান।’

এই আন্দোলনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে ‘আয়নাবাজি’-খ্যাত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন- ‘হোক প্রতিবাদ। বিচার চাই।’ সঙ্গে নিজের ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি কালো করে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন এই তারকা। অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি মঙ্গলবার ফেসবুকে লিখেছেন- ‘এই বাচ্চাদের অবরোধে পড়ে সাড়ে পাঁচঘণ্টায় পূবাইল শুটিং সেটে আসলাম। আমি ভীষণ অসুস্থ, ফিরবো কিভাবে, কয় ঘণ্টায় জানি না। তবুও কোনও রাগ হয়নি। প্রাণছেঁড়াধন, সোনার বাচ্চারা, আমরা তোমাদের কোনও নিরাপত্তা দিতে পারিনি। তাই আজ পথে নামতে হয়েছে তোমাদের। এই মা তোমাদের সাথে আছে। অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না। এটা তোমাদের কোনও এক মায়ের আকুতি।’

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন- বাচ্চা মানে বাচ্চা না, ভাই-বোনেরা আমার! বেশ কিছু ভিডিওতে আন্দোলনরত স্কুল কলেজের ছোট ছোট বাচ্চাদের কথা শুনে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। আমি সবসময়ই বিশ্বাস করেছি কাহলিল জিব্রানের কবিতা। যেখানে লিখা হয়েছে, ভবিষ্যত প্রজন্ম পূর্ববর্তী প্রজন্মের চেয়ে এগিয়েই থাকে। তোমরা এগিয়েই আছো, ভাই-বোনেরা! লাভ ইউ।এখন একটাই অনুরোধ, সমষ্টির এই শক্তিকে একটা সুন্দর ফলাফলের দিকে নেয়ার দাবি তোলো। জাবাল-ই-নুরের ঘটনায় অপরাধীর সাজা হইতে হবে, শাজাহান খানকে ক্ষমতাশূন্য করতে হবে, এগুলা সবই দরকার। পাশাপাশি, দাবি তোলো সামগ্রিক সংস্কারের। সরকার যেনো দ্রুত একটা কমিটি বানায়। যেখানে শুধু প্রবীন নাগরিকেরা থাকবে তা না। তরুন মেধাবী প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলীদেরও রাখতে হবে। সেই কমিটির কাজ হবে, সব কিছু প্রযুক্তি নির্ভর করা। লাইসেন্স, ফিটনেস থেকে শুরু করে, ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা, আউটডোর ক্যামেরা, রুট বন্টন বিষয়ক দূর্নীতি, আইন সংস্কার- মোট কথা রাস্তাঘাট নিরাপদ করার জন্য, অপরাধী সনাক্ত করার জন্য যা কিছু বিবেচনায় নেয়া দরকার সব কিছু বিবেচনায় নিবে। তাহলেই একটা কাজের কাজ হবে। এবং এটা সম্ভব। উবার আসার আগে কি কোনোদিন মনে হইছিলো সিএনজিওয়ালারা সোজা হবে? হয়েছে। এরাও সোজা হবে, সিস্টেম সোজা করলে, এরাও সোজা হবে।

মেহের আফরোজ শাওন লিখেছেন-ওরা কিন্তু রাজনীতি বোঝে না- রাজনীতি করতে পথে নামেও নি, কিন্তু রাজনীতির প্রতি, রাজনীতিবিদদের প্রতি কি পরিমাণ ঘৃণা জন্মে যাবে তাদের মনে ভেবে দেখছেন! এই ছেলেপুলে গুলোই আগামী ২/১ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে- হয়তো ছাত্র রাজনীতিও করবে, আজকের এই ঘৃণা কি ওদের ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে দিবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিনি তো কোমল হৃদয়ের মানুষসারাজীবন সেভাবেই দেখে এসেছি তাকে আজ কেন তার কোমলতা দেখাতে দেরী করছেন? তার সম্বন্ধে এই বাচ্চাগুলোর ধারণা কোনদিকে যাচ্ছে! প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- আপনি ছাড়া আর কে আছে আমাদের? কার কাছে যাব? আপনাকে এই কিশোর কিশোরীরা ভুলভাবে জানুক তা তো চাই না। এদের ঘরে ফেরাতে আপনার একটি আশ্বাসের বাক্যই তো যথেষ্ট। আপনি কি তাদের মাথায় আপনার হাতটা একটু রাখবেন না?

মৌসুমী হামিদ লিখেছেন- এটা ঠিক করছেন না আপনারা। বাংলাদেশ বাদ দিলাম । শুধু মাত্র ঢাকা শহরের যত স্কুল
কলেজ আছে ,সব ছাত্ররা যদি রাস্তায় নেমে যায় তাহলে কিন্তু আপনার ঠেলা বাহিনি কাজে দিবে না ।
আসলেই কাজে দিবে না । সাবধান কিন্তু ।

গত রোববার দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব নামে দুই শিক্ষার্থী জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় নিহত হন। একই ঘটনায় আহত হন আরও ৮-১০ জন শিক্ষার্থী।

ওই ঘটনায় জাবালে নূরের তিন গাড়ির দুই চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১। এর আগে নিহত মিমের বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তারপর থেকে রাজপথে নেমে আন্দোলন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।