আন্ত-কোরিয়ান শান্তিচুক্তি বাতিলের হুঁশিয়ারি সিউলের

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

উত্তর কোরিয়াকে তার সামরিক গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎপক্ষেণ প্রচেষ্টা চালিয়ে না যেতে সতর্ক করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী। আজ সোমবার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে সিউল বলেছে, এর ফলে ২০১৮ সালের আন্ত-কোরিয়ান শান্তি চুক্তি বাতিল হতে পারে। এমনকি প্রতিশোধ হিসেবে উত্তর কোরিয়ায় বিমান নজরদারি আবার শুরু হতে পারে।

 

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রমে নজরদারি চালানোর জন্য মহাকাশে সামরিক স্যাটেলাইট স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। তবে চলতি বছরের শুরুতে কক্ষপথে সামরিক গোয়েন্দা স্যাটেলাইট স্থাপনের প্রথম দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় পিয়ংইয়ংয়ের। অক্টোবরে তৃতীয় প্রচেষ্টার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করেনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ পেছানোর সম্ভাব্য কারণ হলো, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা নিচ্ছে। এর মাধ্যমে আগামী দিনে সফলভাবে উৎক্ষেপণ পরিচালনা করতে পারে।

 

উত্তর কোরিয়াকে তাদের তৃতীয় উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা অবিলম্বে বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা ক্যাং হপিল।

সোমবার এক টেলিভিশন বিবৃতিতে কাং বলেন, ‘আমাদের সতর্কতা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া সামরিক গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে এগিয়ে গেলে আমাদের সেনাবাহিনী জনগণের জীবন ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

 

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মহাকাশে উত্তর কোরিয়ার যেকোনো ধরনের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিষিদ্ধ করেছে। কারণ উত্তর কোরিয়ার এই কার্যক্রমকে তারা দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ছদ্মবেশী পরীক্ষা হিসেবে দেখে।

কাং বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর নজরদারি বাড়ানোর জন্য উত্তর কোরিয়ার তখন সামরিক স্যাটেলাইট প্রয়োজন, যখন তাদের উদ্দেশ্যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা।’

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া মস্কোর কাছ থেকে পারমাণবিক ও অন্যান্য সামরিক সক্ষমতার বাড়ানোর প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। মস্কো এবং পিয়ংইয়ং উভয়ই তাদের মধ্যে এ ধরনের চুক্তির অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে উভয় দেশের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উত্তেজনে বেড়ে যাওয়ায় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রকাশ্যে একে অপরকে চাপ দিচ্ছে।

 

উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সফর করেছেন। সেসময় তিনি রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র কসমোড্রোমে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পুতিনের কাছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানতে চেয়েছিল তার দেশ উত্তর কোরিয়াকে স্যাটেলাইট তৈরিতে সাহায্য করবে কি না। উত্তরে পুতিন বলেছিলেন, ‘এ আলোচনার জন্যই আমরা এখানে এসেছি। তিনি (কিম জং উন) রাশিয়ার রকেট প্রযুক্তিতে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছেন।’

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক কর্মকর্তা কাং স্পষ্টভাবে বলেননি যে, উত্তর কোরিয়া সামরিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তৃতীয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করলে দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিশোধমূলক কী পদক্ষেপ নেবে। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, পদক্ষেপগুলোর মধ্যে ২০১৮ সালের আন্ত-কোরিয়ান সামরিক চুক্তি স্থগিত করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ওই চুক্তিতে উভয় কোরিয়াকে তাদের উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্তে আকাশ নজরদারি কার্যক্রম এবং সরাসরি গুলি চালানোর মহড়া বন্ধ রাখার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

 

কাং দাবি করেন, উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যেই ২০১৮ সালের সামরিক চুক্তি বহুবার লঙ্ঘন করেছে। চুক্তি লঙ্ঘন করে আন্ত-কোরিয়ান যোগাযোগ অফিসে বোমা হামলা, দক্ষিণ কোরিয়ার ভূখণ্ডে ড্রোন নজরদারি ও সামুদ্রিক সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার সামরিক মহড়ার ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি।

কাং বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া বারবার চুক্তির লঙ্ঘন সত্ত্বেও, আমাদের সামরিক বাহিনী ধৈর্য সহকারে সামরিক চুক্তির ধারাগুলো মেনে চলেছে। কিন্তু এটি আমাদের সামরিক প্রস্তুতিতে যথেষ্ট সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

 

তিনি বলেন, চুক্তির নিয়ম মেনে দক্ষিণ কোরিয়া বিতর্কিত পশ্চিম সমুদ্রসীমার কাছে তৈরি বাফার জোনে সামরিক মহড়া এড়িয়ে গেছে। আরও অনেক সামরিক অপারেশন উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করা হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন উদারপন্থী প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যেকার ২০১৮ সালের সামরিক চুক্তিটি দুর্ঘটনাজনিত সংঘর্ষ এড়াতে স্থল ও সমুদ্র সীমানা বরাবর বাফার জোন ও সীমান্তের উপরে নো-ফ্লাই জোন তৈরি করেছিল।

২০১৯ সালে কিম জং উন ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে সম্পর্ক পরবর্তীতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করেছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় প্ররোচিত করেছে।