আধুনিক ওমানের রূপকার সুলতান কাবুসকে হারিয়ে কাঁদছে মানুষ

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

আধুনিক ওমানের নেপথ্যের স্থপতি হিসেবে পরিচিত দেশটির সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদের মৃত্যুতে দেশটিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আরব বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতাসীন এই রাষ্ট্রনায়কের মৃত্যুতে দেশটিতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত এই সুলতানের মৃত্যুতে দেশের সাধারণ জনগণের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারাও শোকাহত।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্যান্সার আক্রান্ত সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীও শোক প্রকাশ করেছেন তার মৃত্যুতে।

শনিবার ভারত ও পাকিস্তানের দুই প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে নরেন্দ্র মোদি ও ইমরান খান সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ওমানের জনগণের প্রতি শোক জানিয়েছেন।

টুইটারে দেয়া শোক বার্তায় ইমরান খান ওমানের প্রয়াত সুলতানকে স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা হিসেবে অভিহিত করেন। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিকে আধুনিক ও গতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে রূপান্তরে তার অবদানের কথা তুলে ধরেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ইমরান খান বলেন, ওমান এক প্রিয় নেতাকে আর পাকিস্তান একজন ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত বন্ধুকে হারাল। তার আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক।

এদিকে, একাধিক টুইটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদের মৃত্যুর খবরে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক; যিনি ওমানকে আধুনিক এবং সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তর করেছেন। তিনি আমাদের এই অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্য শান্তির আলোকবর্তিকা ছিলেন।

প্রয়াত ওমানের এই রাষ্ট্রনায়ককে ভারতের একজন সত্যিকারের বন্ধু বলে অভিহিত করেন নরেন্দ্র মোদি। ভারত এবং ওমানের গতিশীল কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সুলতান কাবুস শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মোদি বলেন, আমি তার কাছে থেকে উষ্ণতা ও স্নেহ পেয়েছি তার সব সময় লালন করবো। তার আত্মা শান্তিতে থাকুক। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে ৭৯ বছর বয়সী ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ মৃত্যুবরণ করেন। আরব বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে থাকা রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন তিনি।

দেশটির নাগরিকরাও সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে সুলতানের কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণ করে টুইট করছেন। ওমানের এই নেতা প্রায়ই নিজে গাড়ি চালিয়ে চলে যেতেন দেশের কোনও প্রান্তে। সেখানে গিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করতেন; শুনতেন তাদের সমস্যা, সম্ভাবনার কথা।

আব্দুল্লাহ বিন হামাদ আল হার্থি নামে দেশটির এক নাগরিক টুইটারে লিখেছেন, মহান সুলতান কাবুসের মৃত্যুর খবরটি আমি প্রথমে পেয়েছি আমার কান্নারত মায়ের কাছ থেকে। এতিম, অনাথ, নিপীড়িত-সহ সব মানুষের পিতা মারা গেছেন। শেইখা নামের অপর এক ওমানি লিখেছেন, তার অনুপস্থিতি মেনে নিতে পারছি না।

১৯৭০ সালে ব্রিটিশদের সহায়তায় অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নিজ পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ওমানের শাসন ক্ষমতায় আসেন সুলতান কাবুস। রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর সংস্কারযজ্ঞ শুরু করে ওমানকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক বিভিন্ন শক্তির লড়াইয়ে সব সময় নিজ দেশকে নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখতেন তিনি। সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে ওমানে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

অবিবাহিত কাবুসের মৃত্যুর পর তার চাচাতো ভাই হাইথাম বিন সাঈদ সুলতান হিসেবে শপথ নিয়েছেন। শপথ নেয়ার পর প্রতিবেশিসহ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।