আদালত প্রাঙ্গণে অঝোরে কাঁদলেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। নিজের সহকর্মী প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর আদালত প্রাঙ্গণে শিশুর মতো কাঁদতে দেখা যায় তাকে। চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনের মামলায় রোজিনাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মে) সকালে রোজিনাকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার। অন্যদিকে আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২০ মে) দিন ধার্য করেন। এরপর তাকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর প্রিজন ভ্যানে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় নারী কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রোজিনার জামিন নামঞ্জুর হওয়ার কথা শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়েন আনিসুল হক। ভিড় থেকে কিছুটা আড়ালে গিয়ে বসে পড়েন। এক পর্যায়ে আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। তাকে কাঁদতে দেখে সহকর্মীসহ অনেকেই বিমর্ষ হয়ে পড়েন।
এর আগে গতকাল সোমবার (১৭ মে) রাতে যখন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয় তখন থেকেই আনিসুল হক দীর্ঘসময় শাহবাগ থানায় অবস্থান করেন। গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বারবার বলেন, ‘সংবাদপত্র হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। একে স্বাধীনভাবে চলতে না দেয়া হলে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ রাতে তিনি বারবার বলছিলেন, ‘মামলা যখন হয়েছে তখন আইনি প্রক্রিয়ায় তারা বিষয়টি দেখবেন।’
সোমবার রাতে তিনি আরও বলেন, ‘রোজিনাকে সচিবালয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এদিনই রোজিনা করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেন। কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘরে তার ছোট্ট একটি মেয়ে রয়েছে। কারও জিম্মায় যেন তাকে রাতের জন্য মুক্তি দেয়া হয়। সকালে আদালতে নিয়ে যাওয়া হোক।’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমর্থক হিসেবে তিনি রোজিনার মুক্তি দাবি করেন। কিন্তু সরকারের কোনো মহল থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে হতাশ হন।
মঙ্গলবার সকাল হতেই ছুটে যান পুরান ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে। হয়তো তিনি আশা করেছিলেন রোজিনার জামিনের শুনানি আজই হবে বা রোজিনাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হবে।
কিন্তু আদালত যখন পুলিশের করা পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন তখন থেকেই তাকে ভীষণ বিমর্ষ দেখা যায়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে মামলা হয়েছে। তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।