নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশের ওপর দুই মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশের ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সংবাদপত্রে কর্মরতদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে। আমরা আশা করছি, আদালতের বিবেচ্য দৃষ্টি নিশ্চয়ই সাংবাদিকদের স্বার্থে বিবেচিত হবে। তবে যেহেতু এটি বিচারাধীন বিষয় আমি এর চেয়ে বেশি বলতে পারি না। শুধু আশা প্রকাশ করতে পারি।’
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) আয়োজিত ম্যাথ অ্যান্ড সায়েন্স সামার স্কুলের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশের ওপর দুই মাসের স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। ফলে এ সময়ে ওই গেজেট প্রকাশ করা যাবে না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে নবম ওয়েজ বোর্ড প্রজ্ঞাপন জারির জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। মন্ত্রিসভা কমিটি চূড়ান্ত করে সেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য আমরা সব কাগজপত্র তৈরি করেছি। সেই পর্যায়ে আদালত থেকে স্থগিতাদেশের একটি রায় এসেছে। সংবাদপত্র মালিকদের পক্ষ থেকে আদালতে গেছে।’
‘সংবাদপত্র মালিকদের যে মামলা সেটাতে সরকার এবং ওয়েজ বোর্ডকে বিবাদী করা হয়েছে। যেহেতু তারা আদালতে গেছেন, এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের বক্তব্য অবশ্যই আদালতে উপস্থাপন করব। যাতে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। স্থিতাবস্থা ও যে সব ব্যাখ্যা চেয়েছে সেগুলো আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করা হবে,’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ডেঙ্গুর কারণে সারাদেশে উদ্বেগজনক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের প্রতীকী কর্মসূচি নিয়ে কেউ কেউ নানা সমালোচনা ও প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন।’
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু লোক আছে যারা কোনো কাজ করেন না। আবার অন্য কেউ কাজ করলে সমালোচনা করে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের মানুষ আজকে উদ্বিগ্ন সেখানে দেখলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কয়েক দিন আগে নতুন নির্বাচনের দাবি নিয়ে ব্যস্ত। সবাই আত্মপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা পাশে না দাঁড়িয়ে বরং সমালোচনা করছে, আবার নতুন নির্বাচন দাবি করছে। এতেই প্রমাণ হয় বিএনপি আসলে জনগণের জন্য রাজনীতি করে না।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বড় হয়ে বাবা-মাকে অবহেলা না করার পরামর্শ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা যখন ছোট ছিলে বাবা-মা স্নেহ দিয়ে তোমাদের সেবা করতেন। এখন তোমরা বড় হয়েছ। পড়াশোনা করছ। একদিন আরও বড় হবে। তোমাদের কাছে অনুরোধ, বড় হয়ে বাবা-মাকে ভুলে যাবে না। তাদের সেবা করবে। কারণ বয়স বাড়লে বাবা-মা হয়ে পড়েন ছোট সন্তানের মতো।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এখন অনেক সন্তানেরা বাবা-মাকে অবহেলা করে। তাদের সেবা করে না। নির্যাতন করে। ফলে পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হচ্ছে। সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। এসব বন্ধ করতে পারলে তবেই শান্তি ফিরে আসবে।’
এ বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে সংসদে আইন পাস করেছে এবং আইনের বাস্তবায়নও করছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান, শেভরনের পরিচালক (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) ইসমাইল চৌধুরী এবং বুয়েটের প্রফেসর ড. সেলিয়া শাহনাজ, এইউডব্লিওর রেজিস্ট্রার ড. ডেভ ডল্যান্ড।
এইউডব্লিওর নিয়মিত শিক্ষকদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অতিথি শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক ও গণিতবিদরা অনলাইনের মাধ্যমে ম্যাথ অ্যান্ড সায়েন্স সামার স্কুলের বিভিন্ন কোর্সের ওপর লেকচার দেন।
অনুষ্ঠানে এইউডব্লিও ম্যাথ অ্যান্ড সায়েন্স সামার স্কুলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য মেধার ভিত্তিতে দুই শিক্ষার্থীকে ‘ইমার্জিং উইমেন লিডার ইন স্টিম অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়। এ দুই শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপসহ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে স্নাতক পর্যায়ে পড়ার সুযোগ দেয়া হবে।