আদালতের নির্দেশে মায়ের কোলে ফিরল শিশু

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

ভিক্ষুকের কোলে সন্তান রেখে পালিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পর শিশু মাহিনকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (৬ মার্চ) বিকেলে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতের নির্দেশে সুরমা বেগমের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার তিন মাসের সন্তানকে। এর আগে পাঁচ দিন শিশুটি বেলাল হোসেন ও নিশি আক্তার নামে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে ছিল। গত ২ মার্চ আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে লালন-পালনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তারা।

 

সোমবার রাত ১০টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ। তিনি ফেসবুকে এ প্রসঙ্গে ‘পূর্ণতা পেলো সেই শিশুর ঠিকানা’ শিরোনামে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন।

শিশুটির দাদা হাফিজ উল্যা বলেন, আমার নাতি এ কয়েকদিন যাদের কাছে ছিল, শিশুটির প্রতি তাদের মায়া জমে গেছে। আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার সময় তারা কান্নাকাটি করেছেন। আমরা মাঝেমধ্যে শিশুটিকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যাবো।

জানা যায়, গত বুধবার (১ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের আধুনিক হাসপাতালের সামনে অজ্ঞাত এক নারী ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে তার কোলের শিশুকে সালমা বেগম (৭০) নামে এক ভিক্ষুকের কোলে রেখে যান। কিন্তু এরপর আড়াই-তিন ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ওই নারী আর ফিরে আসেননি। খবর পেয়ে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের জিম্মায় রাখে।

পরদিন ২ মার্চ সদর থানা পুলিশ আদালতে আবেদন করে ওই শিশুটিকে সমাজসেবা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে দিতে বলে। তবে কাউন্সিলর জসিমের এক নিকট আত্মীয় নিঃসন্তান হওয়ায় তারা শিশুটিকে লালনপালনের জন্য আদালতে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের শিশুটির দায়িত্ব দেন। কিন্তু ওইদিন রাতেই শিশুটির মা ছেলেকে নিতে থানায় আসেন। আইনি জটিলতা থাকায় তখন আর শিশুটিকে নিতে পারেননি তিনি।

সোমবার আইনজীবীর মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে আবেদন করেন শিশুটির মা সুরমা বেগম। এ সময় শিশুটিকে আদালতে নিয়ে আসেন বেলাল-নিশি দম্পতি। আদালত শিশুটির প্রকৃত মা সুরমা বেগমের কাছে শিশুটিকে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তখন শিশুটির দাদা হাফিজ উল্যা ও তার দুই বোন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সুরমার স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুরমার শ্বশুরবাড়ি জেলার রামগতি উপজেলার চরসীতা গ্রামে। তার বাবার বাড়ি সদর উপজেলার মিয়ারবেড়ি এলাকায়। প্রায় ১০ বছর আগে মিরনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মিরন সৌদি প্রবাসী।

শিশুটিকে ভিক্ষুকের কোলে রেখে যাওয়ার কারণ হিসেবে সুরমা বেগম জানান, মিরন কয়েক মাস থেকে পরিবারের খরচাপাতি দেন না। তাকে প্রতি মাসে ১১ হাজার টাকা ঋণ শোধ করতে হয়। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছে। ধার-দেনায় বিপর্যস্ত হয়ে স্বামীর ওপর অভিমান করে তিনি নিজের সন্তানকে ভিক্ষুকের কোলে রেখে বাবার বাড়ি চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর বাবার বাড়ির লোকজন বকাঝকা করায় তিনি পরদিন ছেলেকে খুঁজতে থাকেন। পরে পরিচিত একজনের মাধ্যমে ছেলের সন্ধান পান। তবে আইনি জটিলতার কারণে ওই রাতে ছেলেকে নিতে পারেননি তিনি।