আতরের দাম ২ লাখ ২০ হাজার টাকা

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঈদের দিন আতর-টুপির ব্যবহার একটু বেশিই হয়। শিশু-তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ বয়স যেমনই হোক, ঈদের জামাতে নতুন পোশাকের সঙ্গে চাই নতুন টুপি, সুগন্ধি আতর। এগুলো ছাড়া ঈদের প্রস্তুতি যেন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। তাই শেষ মুহূর্তের ঈদ কেনাকাটায় আতর-টুপির দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা।

রাজধানীর নিকেতনের বাসিন্দা সামছুজ্জোহা। তিনি যমুনা ফিউচার পার্কের আল-হারামাইন আউটলেট থেকে আতর কিনেছেন। পেশায় ব্যবসায়ী সামছুজ্জোহা জানান, ২২ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ‘হারামাইন শেখ’ কিনেছেন। সম্পূর্ণ অ্যালকোহলমুক্ত এই আতর বেশিরভাগ সময়ই তিনি দুবাই থেকে ক্রয় করে থাকেন। শিগগিরই তিনি দেশের বাইরে যাচ্ছেন না, তাই অতিপ্রয়োজনীয় এই সুগন্ধিটি তিনি দেশ থেকেই কিনেছেন।

আল-হারামাইন আউটলেটের বিক্রয় প্রতিনিধি আবু সালেহ জানান, তাদের সংগ্রহে সর্বোচ্চ দুই লাখ ২০ হাজার টাকা দামের আতর রয়েছে। তিনটি বোতল নিয়ে একটি প্যাকেজ। প্রতিটি বোতলে ৩৬ এমএল আতর থাকে। এই আতরের ক্রেতা নির্ধারিত কয়েকজন। কোনো উৎসব উপলক্ষে নয়, সারাবছরই এ আতর তারা ব্যবহার করেন। আল-হারামাইনের বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশি দামের আতর খুব বেশি বিক্রি না হলে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার দামের মধ্যে কিছু আতর রয়েছে, যার ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ঈদ সামনে রেখে এ ক্রেতার সংখ্যা সামান্য বেড়েছে।

ঈদকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার তালিকায় থাকে টুপি ও আতর। কেমন বিক্রি হচ্ছে এসব সামগ্রী- খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে, বাহারি নামের রকমারি আতর ও টুপি আনা হয়েছে দোকানগুলোতে। অভিজাত শপিংমলগুলোর আতর-টুপির দোকানে ক্রেতাদের ভিড় খুব একটা চোখে না পড়লেও বায়তুল মোকাররম মার্কেট ও পুরান ঢাকার চকবাজারের দোকানগুলোর চিত্র ভিন্ন। এখানে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড়।

গত রোববার রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল-মার্কেট ঘুরে যেসব আতর বিক্রি হতে দেখা গেছে সেগুলো হলো- আল-থোরাইয়া, আসিম, আতিফা, বাখুরখজ, জিজিয়ান, জান্নাতুল ফেরদৌস, জান্নাতুল নাঈম, মোখাল্লাত মালকি, মাইনুস মোখাল্লাত, উদ মালিক আতিক, উদ আমিরি, খালতাত আল মুলুক, খালতাত আল-জাওয়াহের, খালতাত আল-থানি, খালতাত আল-মাহা, আতর আল-কসুর, আলমাস, মাতার আল-হাব, নাইট ড্রিম, তোফা আতর, বোরাক, টুইন ফ্লাওয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের আতর। মান ও ওজনভেদে এসব আতরের দাম সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। শপিংমল বসুন্ধরা সিটিতে আল-মাসক আতর দোকানে পাওয়া যাচ্ছে ১৬ হাজার টাকা তোলার আল-উদ আতর। এটি আমদানি করা হয় সৌদি আরব থেকে। এর জন্ম বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে। আগর সৌদি আরবে নিয়ে আরও রিফাইন হওয়ার পর বাংলাদেশে আসে আল-উদ আতর নামে। এই আতরের তোলা দুই হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

আতরের চেয়ে টুপির বাজার জমজমাট। একেকটি টুপি পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাড়ে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তান, ভারত, ওমান, তুর্কি, সৌদি আরবের বিভিন্ন ধরনের টুপির চাহিদাই বেশি। বাংলাদেশে তৈরি টুপির চাহিদাও রয়েছে। বসুন্ধরা শপিংমলের ইজমা আতর ও পারফিউমের বিক্রয় প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন জানান, পাকিস্তানি টুপির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

তরুণদের কথা চিন্তা করে টুপিতেও লেগেছে ফ্যাশনের ছোঁয়া। ইনফিনিটি, কারুপল্লী, আড়ংসহ বিভিন্ন শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে নানা বৈচিত্র্যের টুপি। এসব টুপিতে বাহারি রঙের কাপড় ও সুতার ব্যবহার করা হয়েছে। ভিন্নতা আছে দামেও। হাতের কাজ করা গোল টুপি ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ডিজাইনের বাহারি রঙের টুপি পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া টার্কিশ রুমি টুপি প্রতিটি পাঁচ হাজার টাকা, লেয়াকত ক্যাপ বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৫০০ ও জিন্নাহ ক্যাপ এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। টার্কিশ জালি টুপি ২৫০ টাকা। দেশি ও চীনের তৈরি টুপির মধ্যে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দামের টুপিই বিক্রি হয় বেশি। হাশেমি সুরমা প্রতি প্যাকেট ১০০ টাকা। ইসমত সুরমা ৫০০ টাকা।

বর্তমানে অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে আতর-টুপি। তবে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় এই বেচাবিক্রি তুলনামূলক কম। পারফিউমস বিডির ফাউন্ডার এশাম হায়দার জানান, দুই বছর আগে তিনি অনলাইনে আতর বিক্রি শুরু করেন। তার কাছ থেকে নির্ধারিত কিছু লোক আতর সংগ্রহ করেন। সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দামের আতর বিক্রি করেন তিনি। উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত লোকজনই আতর ব্যবহার বেশি করেন। সম্পূর্ণ অ্যালকোহলমুক্ত আতরের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ আগের তুলনায় বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।