আট মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৪৬ কোটি ডলার

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এসেছে ৯৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলার, যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে আসা রেমিট্যান্সের তুলনায় ১৬.৫৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং চ্যানেল বহির্ভূত অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রবাসী আয়ে। এ কারণে রেমিট্যান্স বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবৈধ লেনদেনের দায়ে বন্ধ করা হয় বিকাশের ২ হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের নাম্বার। এসব পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রবাহ পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ১৩৮ কোটি ডলার। সেই হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স কিছুটা কমলেও গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে আসা রেমিট্যান্সের তুলনায় প্রবৃদ্ধি আসে ২২.১৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৪ কোটি ৭ লাখ ডলার।

গত জানুয়ারিতে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছিল প্রায় ৩৭ শতাংশ। বেশ কয়েক বছর রেমিট্যান্সে এত বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধি দেখা যায়নি। ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি এবং অবৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানো বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের ফলে রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবাহ দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্সে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এদিকে গত অর্থবছরে বিগত ছয় অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আসে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের রেমিট্যান্সের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে। তার আগের অর্থবছরেও (২০১৫-১৬) রেমিট্যান্স কমেছিল ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর আগে দীর্ঘ তের বছর পর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছিল ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। এভাবে রেমিট্যান্স কমতে থাকায় নড়েচড়ে বসে সরকার। রেমিট্যান্স কমার কারণ অনুসন্ধান করে বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পারে, দীর্ঘদিন টাকার দর এক জায়গায় স্থিতিশীল থাকায় অবৈধ উপায়ে বেশি অর্থ আসছে। আর এক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে সহজে সুবিধাভোগীর কাছে অর্থ পৌঁছে দিচ্ছেন হুন্ডিকারবারিরা। এরপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডি রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়।

গত ২৯ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অপব্যবহার করে হুন্ডি তৎপরতা রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থান। অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৬ কোটি ডলার। নভেম্বরে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, আগস্টে ১৪১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার এবং অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়ে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেডিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।