#

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশে তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে ও সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর পদের উপ-নির্বাচন। একই সঙ্গে নির্বাচনের তফসিল কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। ফলে আটকে গেল উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারপ্রচারণা চালানো ঢাকা উত্তরের উপ-নির্বাচন।

নির্বাচন নিয়ে দুই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বেলা ১২টার দিকে হাইকোর্ট ওই স্থগিতের আদেশ দেন। নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেয়ার সর্বশেষ সময় ছিল বৃহস্পতিবার। এর মাত্র একদিন আগে নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিতের নির্দেশ নগরবাসীকে বিস্মিত করেছে। তাদের প্রশ্ন কেন এই রিট এবং কেনইবা স্থগিত হলো নির্বাচন?

এই উপ-নির্বাচন স্থগিতের পর বিএনপি ও বামদলগুলো এটিকে সরকারের কারসাজি বলে অভিযোগ করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আগমগীর বলেছেন, ‘এই উপ-নির্বাচনে সরকার জিততে পারবে না বলেই স্থগিত করা হয়েছে।’

আর সিপিবি-বাসদ ও বাম মোর্চার নেতারা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দায়ী করেছে। তাদের অভিযোগ, ‘এটি সরকার ও ইসির একটি নাটক।’

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল মো. মোখলেসুর রহমান বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ চারটি কারণে এই সিটির উপ-নির্বাচন স্থগিত করেছে আদালত। নির্বাচন স্থগিতে আদালত চারটি চুক্তি দেখিয়েছে।

নির্বাচন স্থগিতে চার কারণ

নির্বাচন স্থগিতের জন্য যে চারটি কারণের কথা জানিয়েছেন ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল মো. মোখলেসুর রহমান, তা হলো-

প্রথম : উপ-নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হলে তার মেয়াদ হবে তিন বছর কিন্তু নির্বাচিত সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তদের মেয়াদ কত বছর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল আদালতের।

দ্বিতীয় : কোনো এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী হতে সেই এলাকার মানুষের অনুপাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ জনগোষ্ঠীর সমর্থন লাগে। কিন্তু ঢাকা উত্তরের ভোটার তালিকাই এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

তৃতীয় : নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করার এই যুক্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, ‌‘২০১৭ সালে জুলাইতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ১৮টি ওয়ার্ড সম্প্রসারণ করে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে। সিটি কর্পোরেশন আইন, ২০০৯ এর ৫ (৩) উপধারা অনুযায়ী মেয়রের পদসহ কর্পোরেশনের শতকরা পঁচাত্তর ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরগণের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হইলে কর্পোরেশন এই আইনের অন্যান্য বিধানসাপেক্ষে যথাযথভাবে গঠিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।’

কিন্তু ডিএনসিসির আগের ৩৬টি ওয়ার্ডের সঙ্গে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত করায় এবং এই যুক্ত করার ফলে ৭৫ ভাগ নির্বাচিত কাউন্সিলর না থাকায় আইন অনুযায়ী মেয়র পদ যথাযথভাবে গঠিত হতে পারে না।

চতুর্থ কারণ : নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করার এই যুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ১৮টি ওয়ার্ড সম্প্রসারণ করে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলোতে ২০১৫ সালে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কী হবে? এরূপ অস্পষ্ট অবস্থা উল্লেখ করে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য

তফসিল আটকে যাওয়ার বিষয়ে বুধবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এক বিফ্রিংয়ে বলা হয়েছে, রায়ের কপি হাতে পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। বুধবার এই উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণের বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেয়ার পর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে একথা জানান ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

ইসি হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালত থেকে লিখিত আদেশ পেয়ে কমিশন আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করবে।

আপিল করবেন কি রাষ্ট্রপক্ষ

রাষ্ট্রপক্ষ এ নিয়ে আপিল করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বুধবার ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আদেশ দেয়ার পর আমরা মাত্র আদালত থেকে বের হলাম। আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নেব আপিলের বিষয়ে।

তিনি নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর বরাত দিয়ে এটাও জানান, নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে তারা বিকেলে বা তারপর বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে।

উল্লেখ্য, ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া পদে পদে উপ-নির্বাচন এবং দুই সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য গত ৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। যেখানে ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করে নির্বাচনের বিস্তারিত সময়সূচি দেয়া হয়।

দুটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই উপ-নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন। ডিএনসিসি মেয়রের শূন্য পদের উপ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল স্থগিত চেয়ে ১৬ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট করেন রাজধানী উত্তরের বেরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং ভাটারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আতাউর রহমান। পরে রিট দুটির শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য বুধবার দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন