#

অনলাইন ডেস্ক : মে দিবস বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন, যার সূচনা হয়েছিল ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে সেদিন শ্রমিকেরা জীবন দিয়েছিলেন। সেই আত্মদানের পথ ধরে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস।

২০১৯ সালে যখন মে দিবস পালিত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী শ্রমিকশ্রেণির অবস্থা ভালো বলা যাবে না। এই মানবগ্রহ ধনসম্পদে অনেক উন্নত হলেও এর পেছনে যে মূল চালিকা শক্তি—শ্রমিকশ্রেণির ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হয়নি। শ্রমের উদ্বৃত্ত মূল্যে গুটিকয়েক মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত হয়েছে বিশ্বের সিংহভাগ সম্পদ। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শিশুশ্রম বন্ধ, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু অঙ্গীকার ঘোষণা ও বাস্তবের মধ্যে এখনো বিরাট ফারাক রয়ে গেছে।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ অনেকটা ভালো হলেও এই শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরি রয়ে গেছে নিম্ন পর্যায়ে। বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রধান তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলেও নতুন মজুরিকাঠামোয় তাঁদের ন্যায্য দাবিদাওয়া অপূর্ণই রয়ে গেছে। ফলে এই শিল্পে অস্থিরতা কাটেনি। শিল্পমালিকদের মনে রাখা প্রয়োজন, শ্রমিকের কাছ থেকে বেশি কাজ আদায় করতে হলে উপযুক্ত মজুরি দিতে হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প খাতের অবস্থাও উদ্বেগজনক। মাত্র কিছুদিন আগে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্পের শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন-ভাতা আদায় এবং নতুন মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে দুই দফায় ধর্মঘট পালন করলেও সরকার দাবি মেনে নেয়নি। লোকসানের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে নতুন মজুরিকাঠামো বাস্তবায়নও ঠেকিয়ে রাখছে তারা। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের জানা উচিত যে লোকসানের জন্য শ্রমিকেরা দায়ী নন, দায়ী হলেন এর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক খাতে যেসব শ্রমিক কাজ করেন, তাঁরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত এবং বৈষম্যের শিকার। হে মার্কেটের শ্রমিকেরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন করলেও বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের এখনো তার চেয়ে অনেক বেশি সময় কাজ করতে হয়। তাঁদের চাকরি ও বেতন-ভাতারও নিশ্চয়তা নেই। এর পাশাপাশি দুঃসংবাদ হলো, একদিকে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের অনেকে বেকার হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন, অন্যদিকে নতুন শ্রমিক যাওয়ার সুযোগ একেবারে কমে গেছে। সরকার তার অঙ্গীকার অনুযায়ী দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক তৈরি করতে না পারায় বিদেশে তাঁদের চাহিদা কমে গেছে।

মে দিবসের পথ ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের অধিকার, বিশেষ করে মজুরি, কাজের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও বাংলাদেশে শ্রমিকেরা বেতনবৈষম্যের শিকার। দু-একটি খাত ছাড়া শ্রমিকদের কর্মপরিবেশও নাজুক। বিশেষ করে জাহাজভাঙা শিল্প, ইমারত নির্মাণশিল্পে শ্রমিকদের কাজ করতে হয় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে। আবার অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বাড়তি সময় কাজ করিয়ে নিলেও ন্যায্য মজুরি দেয় না। এটি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের ৮০ ভাগই নারী হলেও একধরনের নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতির মধ্যে তঁাদের জীবনযাপন করতে হয়। সাম্প্রতিক কালে পরিবহনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী নিগ্রহের ঘটনা বেড়েছে।

মে দিবস পালন তখনই সার্থক হবে, যখন দেশের শ্রমজীবী মানুষ ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মস্থলের নিশ্চয়তা পাবেন। মালিকদের উপলব্ধি করতে হবে, শ্রমিকদের ঠকিয়ে শিল্পের মুনাফা আদায় বা অর্থনীতির বিকাশ নিশ্চিত করা যাবে না। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। এটাই মে দিবসের প্রত্যাশা।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন