আজ বীর মুক্তিযোদ্বা এনায়েত হোসেন চৌধুরীর ৭২ তম জন্মদিন

:
: ৩ years ago

শামীম আহমেদ॥ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্বের মাধ্যমে একটি লাল সবুজের মানটিত্রের দেশ পাওয়ার পর থেকে সার্বক্ষনিক বাংলাদেশের পতাকাবাহী ক্যাপ মাথায় বহনকারী ব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্বা এনায়েত হোসেন চৌধুরীর আজ (১৮) মার্চ ৭২ তম জন্মদিন।

বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর চৌধুরী পরিবারের ৭ম বংশধর হিসাবে ১৯৫০ সালে এইদিনে এনায়েত হোসেন চৌধুরী বরিশাল শহরে জন্ম গ্রহন করেন।
গৃহঙ্গনে শিশু শিক্ষা শেষে ১৯৫৮ সালে তিনি জিলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে জিলা স্কুলে জুনিয়র ক্যাডেট কোর এর অধিনায়ক হিসাবে এস,এস.সি পাশ করে বিএম কলেজে ভর্তি হন এবং তৎকালীন শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকা ৬ দফা আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি উত্তাল ছাত্র গণআন্দোলনে যুক্ত হয়ে রাজপথ থেকে ১৯৭০ সালে বরিশাল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

এসময় ছোট ভাই নজিব হোসেন সেন্টু চৌধুরী হাতেম আলী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি এবং চাচা আজাদ হামিদ চৌধুরী বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের জি এস নির্বাচিত হন।
পিতা সামসুল হোসেন চৌধুরী প্রথমে কলকাতায় এবং পরবর্তীতে বরিশালে ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন।

পিতামহ মকবুল হোসেন চৌধুরী ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেস সদস্য এবং তার ছোট ভাই মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত ভারতীয় আইন সভার সদস্য ও পরবর্তী কালে বঙ্গীয় আইন পরিষদ সদস্য।

একারনেই পারিবারিক ভাবে রাজনৈতিক সচেতনতা ছিল তার মাঝে বেশী। ১৯৭০ সালে নির্বাচনী প্রচারনায় বঙ্গবন্ধু ৭ দিনের জন্য বরিশালে আগমন করলে ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে তার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন এনায়েত হোসেন চৌধুরী।

১৯৭১ সালের ২৫ই মার্চ গভীর রাতে তৎকালীন আওয়ামীলীগের নেতা এ্যাড. নুরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে বরিশাল পুলিশ লাইন থেকে অস্ত্র সংগ্রহ ও ২৬ ই মার্চ সরকারী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেজর জলিলের উপস্থিতিতে “স্বাধীন বাংলা সরকারের সচিবালয়” প্রতিষ্ঠায় তিনি সেময় সাহসী ভূমিকা পালন করেন।
২৫ই এপ্রিল বরিশাল শহর পতনের পর গ্রাম-গঞ্জে ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করা, প্রশিক্ষনের জন্য ভারতে প্রেরনসহ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে যুদ্বে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

দেশ হানাদার মুক্ত স্বাধীনতার পর বিএম কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন এবং বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন।

আইনশাস্ত্রে পড়াশুনা করেও তিনি আইন পেশায় নিজেকে যুক্ত করেননি। ১৯৭৫ সালে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তীতে সাংস্কৃতিক কর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ব করে গঠিত বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের মাধ্যমে তিনি স্বৈরাচার এরসাদ বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ভূমিকা পালন করেছেন।

সমন্বয় পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও সভাপতি হিসাবে প্রর্যায়েক্রমে তিনি ৭ বার সভাপতি ও সম্পাদকের দায়ীত্ব পালন করেছেন।

স্বাধীনতারন পর থেকে বরিশাল শহীদ মিনার,মুক্তিযোদ্বা সংসদ,শিক্ষাঙ্গন,সাংস্কৃতিক অঙ্গন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, কয়েকটি ট্রাস্টসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক সংগঠনের সংঙ্গে তিনি জড়িত আছেন।

এককালীন মধ্যস্বত্ত্বভোগী জমিদার পরিবারের ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমানে এস্টেটের মোতাওয়াল্লী হিসাবে বরিশাল সম্পত্তির রক্ষনা-বেক্ষনের কাজে নিয়োজিত আছেন।
বৃদ্বা মাতা, ছোট ভাইয়ের পরিবার-পরিজন নিয়ে বরিশাল শহরের প্যারারা রোডস্থ চৌধুরী কমপাউন্ডে একজন সাধারণ নাগরীক হিসাবে জীবনযাপন করছেন এনায়েত হোসেন চৌধুরী।

বীর মুক্তিযোদ্বা এনায়েত চৌধুরী ব্যক্তি জীবনে একজন চিরকুমার, সদাহাস্য,নির্লোভ ও স্পষ্টভাষী মানুষ হিসাবেই তাকে বরিশাল সহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা তাকে চেনে।
আজ সোমবার ১৮ই মার্চ বীর মুক্তিযোদ্বা এনায়েত হোসেন চৌধুরী জীবনের ৭১ টি বছর পার করে দিয়ে ৭২ বছরে পা রাখলেন।

তিনি নতুন আরো একটি বছরে পা দিয়ে সকলের কাছে দোয়া ও ভালবাসা কামনা সহ সবার সাথে মিলে কাজ করার মাধ্যমে মিশে থাকার প্রত্যশা কামনা করেন।