আজ জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষে বরিশালে ফিরেছেন জেলা প্রশাসক এস, এম, অজিয়র রহমান

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago
আজ জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষে বরিশালে ফিরেছেন জেলা প্রশাসক এস, এম, অজিয়র রহমান

মোঃ শাহাজাদা হিরা: আজ ২০ জুলাই ঢাকা থেকে বরিশালে ফিরেছেন জেলা প্রশাসক বরিশাল এস, এম, অজিয়র রহমান। গত ১৩ জুলাই থেকে ১৯ জুন ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত ৮ দিন জেলা প্রশাসক সম্মেলন, ২০১৯ সহ অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য ঢাকায় অবস্থান করেন তিনি। সফলতার সাথে জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষে আজ ২০ জুলাই তিনি বরিশালে ফিরেছেন।

এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলন, ২০১৯ এ তিনি বরিশাল জেলার সমস্যা ও সম্ভাবনার ১২১ টি বিষয় তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসন বরিশালের পক্ষ থেকে উত্থাপনযোগ্য ১২১ টি বিষয়ের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য বিষয়াবলি তুলে ধরা হলো। বরিশালে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ভোলা বরিশাল পাইপ লাইন স্থাপন, শেবাচিম কে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, বরিশাল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বরিশালে আরও দুইটি সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, বরিশালে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মান, ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন বধ্যভূমি এলাকায় ফুড গোডাউনের অব্যাবহৃত জমি মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স এর জন্য বরাদ্দ করা, বরিশালে একটি আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার স্থাপন, বরিশাল মহানগরে জেল খালসহ ২৩ টি খালের প্রয়োজনীয় খনন ও সংস্কারের লক্ষ্যে বিশেষ অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং জলবায়ু ট্রাস্টের অধীনে বরিশাল মহানগরের সকল খাল উদ্ধার, সংস্কার ও আধুনিকিকরণ এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, জীবনানন্দ দাশের ভাস্কর্যসহ পূর্নাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য বরাদ্দ প্রদান, বরিশাল বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রূপান্তর, বরিশালের উজিরপুরে অবস্থিত সাঁতলা বিলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিলে পিকনিক স্পট স্থাপন ও সৌন্দর্য বর্ধন করা, কীর্তনখোলার তীরভূমিতে বৃক্ষরোপণ ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বরিশালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর উভয়পাশে নদীশাসন করে ইকো ফ্রেন্ডলি শিশু পার্ক তৈরি, বরিশাল বিভাগীয় যাদুঘর সংলগ্ন পুকুরটি সংরক্ষণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও আধুনিকীকরণ করা, বরিশালে একটি গার্মেন্টস পল্লী প্রতিষ্ঠা করা, সায়েস্তাবাদ-মুলাদী পানবাড়িয়ায় একটি ফেরী স্থাপন, ইলিশ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন, বরিশালে একটি মৎস্য গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা, বিটিভি সম্প্রচার এর জন্য বরিশালে একটি উপকেন্দ্র স্থাপন। এছাড়াও তিনি আরো শতাধিক বিষয় উত্থাপন করেছেন।

জেলা প্রশাসক সম্মেলন চলাকালীন তিনিসহ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকল বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকবৃন্দ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ/বৈঠক করেছেন। পাঁচ দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১৪ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। জেলা প্রশাসকদের পক্ষে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম ও শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনকারী জেলা প্রশাসকদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসিদের ৩১ দফা নির্দেশনা দেন। ডিসিদের যেসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী: (১) ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী কেন্দ্রীয় পর্যায় হতে তৃণমূল পর্যন্ত উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে আপনাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (২) ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন করতে হবে। (৩) সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানী বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। (৪) জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আপনাদের আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। (৫) যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। (৬) গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনে আপনাদের ব্রতী হতে হবে। (৭) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’র উন্নয়ন ও বিকাশে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে হবে। দৈনন্দিন প্রয়োজনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে জেলার সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। (৮) তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। (৯) শিক্ষার সকল স্তরে নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার হ্রাস এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। (১০) ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।(১১) কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিতে হবে। (১২) ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকা- কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। (১৩) দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। (১৪) পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। (১৫) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২’ এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলি অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।(১৬) সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলিকে কার্যকর করতে হবে। (১৭) জেলা প্রশাসকগণ জেলাপর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সকল কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে হবে। (১৮) দপ্তরসমূহের বিদ্যমান সেবাসমূহ তৃণমূলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্য মেলা, সেবা সপ্তাহ পালনসহ ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। (১৯) শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য-পরিবহন ও আমদানি-রপ্তানি নির্বিঘœ করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।(২০) বাজার-ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। ভোক্তা-অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির যে কোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। (২১) নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিবাহের মত সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তি’র জন্য আপনাদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। (২২) নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। (২৩) শিশু-কিশোরদের পুষ্টিচাহিদা পূরণ এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।(২৪) প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। (২৫) পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলির সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া, পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। (২৬) বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে এ ব্যবস্থা নিতে হবে। (২৭) জেলাসমূহের আকার ভিন্ন ভিন্ন। ছোট-বড়-মাঝারি ভৌগলিক অবস্থানও ভিন্ন। উন্নযন পরিকল্পনায় এ বিষয়গুলি বিশেষভাবে দৃষ্টি রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। (২৮) স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, জনগণের চাহিদা এবং উন্নত জীবন নিশ্চিতকরণের বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে প্রকল্প/উন্নয়ন কর্মসূিচ গ্রহণ করতে হবে। (২৯) চিত্ত বিনোদন ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুবিধার্থে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে হবে। (৩০) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, হিজড়া, বেদে ও প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। জলাধার সংরক্ষণের নিমিত্তে খাল খনন ও পুকুর খনন করতে হবে। পরিকল্পিত সড়ক, নগরায়ন ও বনায়ন নিশ্চিত করতে হবে। (৩১) গৃহহারা, ভূমিহীন ও ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে ।