এক সপ্তাহের লকডাউনের প্রথম দিন সোমবার (৫ এপ্রিল) আরেক দফা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। এর মাধ্যমে দুই দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ল ১০ টাকা।
এর আগে গত শনিবার (৩ এপ্রিল) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় সোমবার (৫ মার্চ) থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন দিতে যাচ্ছে সরকার।
লকডাউনের এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শনিবার দুপুর থেকে রাজধানীর বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে যায়। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলুসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাড়তি পরিমাণে কেনেন ক্রেতারা।
ক্রেতারা বাড়তি পণ্য কেনার কারণে সন্ধ্যার পরপরই কোনো কোনো খুচরা দোকানে পেঁয়াজ শেষ হয়ে যায়। আর রোববার সকাল হতেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন পাইকাররা। ফলে খুচরা বিক্রেতারাও কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করেন।
অবশ্য এতেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি থেমে থাকেনি। রোববারের মতো সোমবার সকালেও পাইকারি বাজারে গিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা দেখেন পেঁয়াজের দাম কেজিতে আরও পাঁচ টাকা বেড়েছে। ফলে পেঁয়াজের দাম আরও এক দফা বাড়িয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রোববার যে ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন, আজ তারা ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।
পেঁয়াজের এই দাম বাড়ার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, ‘লকডাউনের খবরে রোববার পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। আজ আবার দাম বাড়বে ধারণাই করতে পারিনি। সকালে বাজারে গিয়ে দেখি গতকালের মতো আজও পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের অভাব নেই। মূলত পাইকারি বাজারের ওপর পেঁয়াজের দাম বাড়া অথবা কমা নির্ভর করে। দুই দিনে পেঁয়াজের দাম যেভাবে বাড়ল, তাতে পাইকারি বাজারে দ্রুত নজরদারি না বাড়ালে দাম আরও বাড়তে পারে।’
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আতাউর বলেন, ‘দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। আজ পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়লেও পেঁয়াজের ক্রেতা কম। আগের দুই দিন বাড়তি কেনার কারণেই হয় তো এখন ক্রেতা কম। তবে পাইকারিতে যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে রোজার শুরুতে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে।’
সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ী মীর সোহেল বলেন, ‘ধারণা ছিল এবার রোজার শুরুতে পেঁয়াজের দাম কমবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেই ধারণা ভুল প্রমাণ হবে। কারণ চাহিদা কমার পরও আজ নতুন করে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের ভালো উৎপাদন হাওয়ায় এবার পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক কম ছিল। দুদিন আগেও ৩০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। আর এখন আমাদেরই কিনতে হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি। মূলত লকডাউনের কারণে সব ওলটপালট হয়ে গেছে। লকডাউনে মানুষ অতিরিক্ত পেঁয়াজ কেনার কারণে দাম বেড়েছে।’
পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী গৌতম বলেন, ‘দুই দিনে মানুষ যে হারে পেঁয়াজ কিনেছেন, তাতে বাজারে পেঁয়াজের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে দাম বেড়ে গেছে। তবে আমাদের ধারণা এই দাম থাকবে না। কিছুদিনের মধ্যেই দাম কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে হালি পেঁয়াজ (ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ) আসছে। পেঁয়াজের উৎপাদনও ভালো হয়েছে। আবার ক্রেতারা বাড়তি পরিমাণে কেনায় চাহিদাও কমবে। ইতোমধ্যে আজ বিক্রি কমে গেছে।’
শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ মাজেদ বলেন, ‘বাজারে মাল (পেঁয়াজ) কম। সুতরাং দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
এ সময় কিছুটা বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়লে আপনাদের সমস্যা কী। দাম বাড়ছে, একটু বাড়তে দিন। এতে চাষিরা কিছু টাকা পাবেন। পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা হলে তো সমস্যা নেই।’